পাঠকই লেখক ডেস্ক: পৃথিবীতে কোন মানুষ সচেতন নাগরিক হয়ে কিংবা জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে পৃথিবীতে আগমন করেননি । বরংচ শিশুটিকে ধিরে ধিরে একজন সচেতন নাগরিক,একজন দেশ প্রেমিক কিংবা দেশ ও জাতির সম্পদ করে গড়ে তুলতে, শিশুটিকে দিতে হয়েছে মমতাময়ী সহসার বানী ।
আজকে যারা বিশ্বের মুকুট কিংবা আধিপত্য বিস্তারকারী আমরা তাঁদের জীবনের পিছনের গলিতে তাকালে দেখতে পাই,ছোট শিশুটিকে বেড়ে উঠার জন্য কোন মহৎ ব্যক্তির মমতাময়ী স্পর্শকাতর রয়েছে । যাই হোক একজন শিশু পৃথিবীতে আগমন করার পর থেকে যত দিন সে শিশু কিশোর বয়সে পদার্পণ করবে ততদিন তারা আমাদের কাছে কিছু অধিকার প্রাপ্য ।
শিশু মন যখন সে অধিকার গুলো থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়, তখন থেকেই বিগড়ে যায় শিশু মনটি । ওই সময় শিশু কিশোরদের বিবেক এমন পর্যায় ধারন করতে পারে যা ভাবনার জগতে ভাবা কষ্ট সাধ্য ।
আমরা শিশু কিশোরদের কাছে শুধু প্রত্যাশার হাত বাড়িয়ে থাকি, যে পরীক্ষায ভাল করতে হবে এটা করা যাবেনা ওটা করা যাবেনা, নানা আদেশ নিষেধ জারি করে দেই তাদের চলার পথে ।
কিন্তু শিশু কিশোর, কিশোরীরাও যে আমাদেরে কাছে তারা কিছু অধিকার প্রাপ্য আজকের গুনে ধরা সমাজ বিবেচনা তা করতে চায়না । যার জন্য বর্তমানের ছেলে মেয়েরা নিজ বাবা-মা কেও খুন করতে দ্বিধা বোধ করেনা । আমি আজ শুধু আলোচিত ঐশীর দিকে অঙ্গুলী ইশারা করতে চাইনা,আমি তাদের দিকে অঙ্গুলী ইশারা করছি যে সমাজ তাকে ভয়ানক করে গড়ে তুলেছে তাদের প্রতি ।
বর্তমান সময়ে গ্রাম বাংলার চিত্রের দিকে তাকালে হয়ত এমন হাজারো ঐশী বেড়িয়ে আসবে পর্দার অন্তরাল থেকে ।
৩০-১০-২০১৫ গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে মেয়ের লাথিতে বৃদ্ব বাবা(মুক্তিযোদ্বা) নিহত হয় । এ ঘটনার জন্য কে দায়ী, আমি না, আপনি? না এই সমাজ, না এই দেশ ও জাতি । আজ আমি মনে করি যে সমাজ, যে পরিবার, তাকে এমন উগ্র করে গড়ে তুলেছে তারাই আজ প্রকৃত অপরাধী ।
সারাদেশে শিশু কিশোরদের নিয়ে প্রকাশিত অপ্রকাশিত যত ঘটনা প্রবাহ আছে তাদের জীবন পাতায় তাকালে দেখা যায় তারা বেড়ে উঠার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত ।
চলুন দেখা যাক শিশু কিশোররা আমাদের কাছে কী কী অধিকার প্রাপ্য-
শিশু কিশোরদের চলার পথে, নানা দিক দিয়ে নানা ভাবে আমাদের কাছে অধিকার প্রাপ্য তাদের জীবন প্রবাহ সঠিক সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য । আমরা যখন তাদের প্রাপ্য অধিকার গুলো দিতে জানব তখনই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশিত কিছু পেয়ে যাব । চলুন দেখা যাক শিশু কিশোরদের প্রতি আমাদের কি কি কর্তব্য রয়েছে ।
সাহস দিবেন: শিশু কিশোরদের চলার পথে, লেখাপড়া, দিয়ে খেলাধুলা, আনন্দ বিনোদনে, মোট কথা জীবনের চলার পথে নৈতিকতার দিক সকল বিষয়ে সাহস দিবেন,উৎসাহ দিবেন । কখনো ভয় দেখাবেননা । ভয় দেখালে শিশু কিশোরদের মন চুবসে যায় যার ফলে সে তার জীবন প্রবাহকে সাজাতে হিমশিম খেয়ে যায় ।
শিখিয়ে দিবেন: প্রতিটি বিষয়ে তাদের শিখিয়ে দিবেন । তাদের সামনের পথ সুগম করে দেয়ার জন্য শিশু কিশোর বয়সে তাদের শিখিয়ে দেয়াই আমাদের কর্তব্য । কখনো কোন কাজে কিংবা কোন বিষয়ে লজ্জা দিবেননা । লজ্জা দিলে শিশু কিশোরদের মন ভেঙ্গে যায়,যার ফলে সে না পারা কাজটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ।
বুঝিয়ে দিবেন : শিশু কিশোর বয়স হল বড়দের কাছ থেকে শিখার চরম এক মুহুর্ত । আর এই বয়সে শিশু কিশোররা ভুল করতেই পারে এটাই বাস্তবতা । সে ভুল যদি আমাদের শিশু কিশোররা করে থাকে সেটা ক্ষমা না করে ধমক দিয়ে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া মারাত্বক অপরাধ । এ সময় তাদেরকে ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে দিলে আশা করা যায় সে প্রকৃত কিছু জানতে শিখবে ।
প্রশংসা করবেন: শিশু কিশোরেরা অনেক সময় উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অনেক কিছু করতে চায়, যেমন- খেলাধুলা, গান করা, ছবি আঁকা, বিনোদন পছন্দ করা, মোট কথা তার যে ধরনের প্রতিভা রয়েছে সে প্রতিভা প্রকাশ করতে সে ইচ্ছা পোষণ করবে এটাই সত্য । আমরা যখন তার প্রতিভার প্রশংসা না করে তিরস্কার করে থাকি, তখন তাদের কোমল মনটিতে আমাদের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে । সুতরাং তাদের সকল কিছুতে তিরস্কার না করে প্রশংসা করতে চেষ্টা করবেন, তাহলেই দেখবেন আপনার প্রতি তার এক ধরনের ভালবাসা সৃষ্টি হবে ।
স্নেহ করবেন: বড়দের কাছ থেকে ছোটরা স্নেহ পাবে এটাই জগত প্রকৃতি কিংবা নৈতিকতার নিয়ম । আমরা যখন তাদের স্নেহ করব বিনিময় ছোটরা আমাদেরকে সম্মান করতে শিখবে । তাদেরকে কখনো ভুলেও গাল মন্দ করবেননা । গাল মন্দ করলে তারাও এক সময় আপনার সাথে সম্মানের পরিবর্তে অসম্মান করতে শিখবে ।
ভালবাসবেন: শিশু কিশোররা সর্ব সময় বড়দের কাছ থেকে ভালবাসা পেতে চায় । আর সে ভালবাসা থেকে যখন সে বঞ্চিত হয়, তখনই তাদের কোমল মনটি নষ্ট জীবনের দিকে পা বাড়াতে থাকে ।
মর্যাদা দিবেন: বর্তমান সমাজের অনেক পরিবার শিশু কিশোরদের কথার কোন মর্যাদা কিংবা গুরত্ব দিতে জানেনা, যার ফলে তার মনে এক ধরনের একাকিত্ববোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে । শিশু কিশোররা যখন এই একাকিত্ববোধ করেন তখনই সে এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভোগ করে যা তার ভবিষৎ জীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে থাকে ।
সঠিক শিখাবেন: বড়দের কাছ থেকে শিশু কিশোররা শিক্ষা গ্রহন করবে এটাই সত্য । আমরা অভিবাবক কিংবা বড়রা তাদের যখন যা শিখাব তারা তাই শিখবে । সুতরাং আমরা যেন তাদের সঠিক নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকি ।
সৎসঙ্গ দিবেন : সঙ্গ মানব জীনকে পরিবর্তন করার এক প্রধান হাতিয়ার । সৎসঙ্গে মানুষ সততার বাণী দিয়ে সৎ হতে শিখে আর অসৎ সঙ্গে মানব জীবন ধ্বংসের পথে পা বাড়ায় । সঙ্গ মানব জীবনের অন্যতম এক মাধ্যম । আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের প্রতি যেন এ বিষয়টা যথাযোগ্যভাবে গুরত্ব দিয়ে থাকি । কারন অসৎসঙ্গে আমাদের শিশু কিশোররা যদি দিকবিহীন পথে পা বাড়ায় এর জন্য কিন্তু আমরাই দায়ী । সুতরাং এ বিষয়গুলোর প্রতি যেন আমরা যথাযোগ্য গুরত্ব দিয়ে থাকি ।
শিশু কিশোররা দেশ ও জাতির আগামী দিনের কর্ণধার । এ সমাজ তাদেরকে যেভাবে গড়ে তুলবে তারা সেভাবেই গড়ে উঠবে । অতএব একজন শিশু ধ্বংস হওয়া কিংবা একজন সৎ দক্ষ দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য একটি সমাজের বৈশিষ্টই যথেষ্ট । আমরা যদি আমাদের দেশ ও জাতিকে গগণের চরম শিখরে পৌঁছাতে চাই তাহলে যেন আগামী দিনের ভবিষৎ গুলোকে সততার নেতৃত্বে গড়ে তুলি । সৎ দক্ষ দেশপ্রেমিক এবং দেশ ও জাতির উজ্জল নক্ষত্র হয়ে গড়ে উঠার জন্য, উপরে উল্লেখিত অধিকার গুলো থেকে এদেশের শিশু কিশোররা যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্য সুশীল সমাজের নাগরিকদের প্রতি বিনয়ী আহবান রইল ।
লেখক পরিচিতি
নাম: মো: সেলিম মিয়া
গ্রাম: ভিটিপাড়া, পো: সিংহশ্রী
থানা: কাপাসিয়া, জেলা: গাজীপুর
২০ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস