মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি : মাগুরার মহম্মদপুরের কিশোর ইব্রাহিম শেখ (১৩) পাখিপ্রেমী হিসেবে পরিচিতি। বনের পাখিদের সঙ্গে সে গড়ে তুলেছে সখ্যতা।
মুখ দিয়ে শিস বাজিয়ে ডাক দিলেই ছুটে আসে পাখিরা। ৪-৫টি পাখি উড়ে এসে কাঁধে, মাথায় ও হাতে এসে বসে। পাখিদের সঙ্গে রীতিমতো তার প্রেম জমে উঠেছে।
ইব্রাহিমের বাড়ি উপজেলা সদরের বাঔজানি গ্রামে। তার বাবার নাম ইসরাফিল শেখ। আরও পড়ুন: সোহেল তাজ আবার রাজনীতিতে ‘ফিরছেন’
পাখির সঙ্গে তার সখ্যতার খবর এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে। অনেকেই দেখতে আসেন ইব্রাহিম ও তার পাখিদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর রহমান জানান, পাখির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে কিশোর ইব্রাহিমের। পাখি তাকে অনুসরণ করে। আনুমানিক ১০টি শালিক পাখি আছে এমন।
বনের এই পাখি সব সময় তার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। সে পাখিকে খাবার দেয়, যত্ন নেয়। ঝড়ে বাসা ভেঙে গেলে পাখির বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে রেখে সেবা করে সুস্থ করে বনে ফিরিয়ে দেয় সে। তাই ডাক দিলেই পাখি চলে আসে।
ইব্রাহিম শেখ জানায়, এক ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে স্কুলকে বিদায় বলেছে। পড়াশোনা না হওয়ার পেছনেও আছে এ পাখিপ্রেম।
ছোটবেলা থেকে পাখির প্রতি তার ভালোবাসা। বছরখানেক আগে ঝড়ে বাসা ভেঙে আহত দুটি শালিক পাখির বাচ্চা পড়ে পায়। অনেক সেবা যত্ন করে সুস্থ ও বড় করে তোলে সে। পাখি দুটি পোষ মেনে যায়।
সারা দিন খাবার খেয়ে ঘুরেফিরে আবার বাড়ি ফিরে আসে। ডাকলে চলে আসে। সব সময় তার পেছন পেছন হেঁটে বেড়ায়। এ পাখির দেখাদেখি আরও পাখি তার কাছে আসতে থাকে।
সে আরও বলে, পাখিদের ভালোবাসার কারণে তাদের ভীতি দূর করতে পারছি বলেই পাখিরা আমার কাছে নিরাপদ মনে করে। পাখিদের ভালোবাসলে যে কোনো পাখি কাছে ডেকে আনা সম্ভব।
বাবা ইসরাফিল শেখ বলেন, পাখির জন্য ছেলের পড়ালেখা হলো না। সারাদিন পাখির পেছনে ছুটে বেড়ায়। পাখি তার ধ্যান জ্ঞান, পাখি তার নেশা। পাখিকে খাবার দেয়, যত্ন করে। পাখির সঙ্গে কথা বলে। সে মনে হয় পাখির ভাষা বোঝে।
মা মোরিনা বেগম বরেন, ছেলেটির পাখিপ্রেম এক সময় বিরক্ত লাগত। বকাবকি করতাম। এখন আর কিছু বলি না। পাখির খাবার কিনতে টাকা দিতে হয় নিয়মিত।
মহম্মদপুর উপজেলা সদরের আলোকচিত্রী ও পাখিপ্রেমী জালাল উদ্দিন হাক্কানি বলেন, কিশোর ইব্রাহিম শেখের পাখির প্রতি এ ভালোবাসা মানুষকে অবাক করেছে। বনের পাখিকে ডেকে কাছে আনা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। পাখির সঙ্গে এই শিশুর বিরল সখ্যতা অসাধ্যকে সাধ্য করেছে।-যুগান্তার