খায়রুল হাসান (আপন): বেশ আগে থেকেই শুনে আসছি শিক্ষার কোন বয়স নেই । পবিত্র ইসলাম ধর্মেও আছে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা । আরো আছে “ সুদুর চীন দেশে হলেও শিক্ষার জন্য যাও’’ । ব্যতিক্রম দেখছি একমাত্র আমাদের দেশেই । কেন এই নিয়ম ? কিছুদিন থেকে শুনতে পাচ্ছি ৬+ অর্থাৎ ৬ বছর শেষে সপ্তম বছরে পা দেয়া ছাড়া কেউ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেনা । তাহলে প্রাথমিক সমাপনী শেষ করতে গিয়ে তার বয়স কত হচ্ছে? আবার ১১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে তাকে ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেষন করতে হয় । অর্থাৎ ১১ এর কম কিংবা ১৭ এর বেশি কেউ ৯ম শ্রেণিতে পড়তে পারবে না । তাহলে এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে তার বয়স কত হচ্ছে? এরপর এইচ.এস.সি তারপর উচ্চ শিক্ষা । মাঝে আছে ডাক্তারী বা ইন্জিনিয়ারিং পড়ালেখা । সেখানেও বয়সের বাধা দেয়া আছে । কেউ এইচ.এস.সি পাশের ২বছর পর আর ডাক্তারী বা ইন্জিনিয়ারিং পড়তে পারবেনা । কেন এত বাধা ? আর্থিক অসংগতি বা যে কোন কারনেই কেউ মেডিকেল বা ইন্জিনিয়ারিং পড়তে চেয়েও আপাতত পারল না । পরবর্তীতে তার সে সংগতি বা সুযোগ হলেও আর সে করতে পারবেনা । এ কেমন নিয়ম? আমার জানামতে একমাত্র বাংলাদেশেই এই নিয়ম বর্তমান । বেশ কিছু দিন আগে ইন্টারনেটের কল্যানে জানতে পারলাম চীন, জার্মান বা রাশিয়া যে কোন দেশেই আপনি ডাক্তারী পড়তে পারবেন যে কোন বয়সে । সেখানে বয়স কোন বাধা নয় । তাহলে আমার দেশে কেন সে বাধা ? উচ্চ শিক্ষার মাঝের সেশন জট তো আছেই । তাহলে একজন চাকুরী প্রার্থীর বয়স কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ? অথচ ভারতের মতো দেশেও আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি ১২ বছরের শিশু গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে । আমেরিকার মতো বা গ্রেট ব্রিটেনের মতো দেশে ৮-৯ বছরের শিশুর আই.কিউ আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করা হয়। যেখানে আমার দেশে ৬+ হিসাবে ১২+ বছরে তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ার কথা সেখানে সে গ্র্যাজুয়েশন করবে কিভাবে?? স্বপ্নটাকে জোর করে আটকে রাখা নয় কি ?
এত উচ্চতর ভাবনা বাদ দিয়ে সাধারণ ভাবনায় আসি । আমরা প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত । আমরা জানি আমাদের গ্রামীন পরিবেশ কেমন । গ্রামের অভিবাবকরাই বা কেমন । তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার শিশুর নাম কি ? সে উত্তরে শিশুকে দেখিয়ে বলবে এরে (হুক্কা বা হুক্কি) তোর নাম কি ? এই যদি হয় অবস্থা সেখানে বয়স কিভাবে বলবে ? তবুও তার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে । মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তির সময়ই শুরু হয় তার বয়স বিভ্রাট । আমরা জানি গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েই ১৩ বা ১৪ বছরেও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতে পারে না । এখন নবম শ্রেণির বয়স হিসেব করে আবার তার জন্মতারিখ সংশোধন করে দিতে হয় । এটা কি মিথ্যাচার নয় ? সরকার শিক্ষকদের কে বলছে সত্য, ন্যায়, নিয়মনীতি শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক গড়ে তুলবেন । চেয়ারম্যানের কাছে গেলে চেয়ারম্যান বলে বয়স ঠিক করতে হলে বিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন লাগবে । যেখানে প্রথমেই শিক্ষক একটা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন (সেটা ছাত্রও জানতে পারছে) তাহলে সে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে কিভাবে ? আবার সরকারই বলছে শিক্ষার কোন বয়স নেই তাহলে ৯ম বা ১০ম শ্রেণিতে আসলে তাকে জটিলতায় পড়তে হবে কেন ? আবার বলছে ১১+ থেকে ১৭+ পর্যন্ত ৯ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে । সেটাও বা কিভাবে সম্ভব?? কারণ ৬+ হিসাবে ১১+ তো তার ৫ম শ্রেণি সম্পন্ন করতেই লেগে যাচ্ছে সে ৯ম শ্রেণিতে ১১+ এ কিভাবে ভর্তি হবে ??১৩+ এর আগেতো সে ৮ম শ্রেণিই শেষ করতে পারবেনা । রেজিস্ট্রেশনের প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে ?? আমার জানামতে বেগমগঞ্জ উপজেলায় থাকা কালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সরকার আবুল কালাম আজাদ স্যার এব্যাপারটা নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সোচ্চার ভুমিকা রেখেছিলেন আজ থেকে আরো ২/৩ বছর আগে । অথছ এখনো আমরা দেখতে পাই ফলাফল শুন্য । সরকারের এসব বয়সের বেড়াজালে আসলেই মনে প্রশ্ন জাগে শিক্ষার বয়স কত ?? অন্তত বাংলাদেশে !!
লেখক: সহকারী শিক্ষক
উত্তর পশ্চিম একলাশপুর স.প্রা.বি
বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী ।
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস