আপনজন চেনা যায় কখন? দু:সময়ে। আমার জীবনে যখন চরম দু:সময় তখন দেখেছি সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ, অচেনা মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। স্নেহে, মমতায় আমাকে ঘিরে রেখেছে। সুনামগঞ্জ এমনই।
আর একটা ঘটনা, সম্ভবত একানব্বই সালের। আমরা তখন আমার মা এর বন্ধুর বাসায়। ওরা সুনামগঞ্জের খুব পরিচিত হিন্দু পরিবার। হঠাৎ শুনলাম ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে। আমার মা আর মাসি ভয়ে জড়াজড়ি করে বসে থাকলো আর আমারা ওই বাসায়ই থেকে গেলাম। আজ থেকে সাতাশ বছর ধরে ওই পরিবারকে আমি নিজের পরিবারই মনে করি।
সুনামগঞ্জ এমনি। ছোট্ট শহর। হাওড়ে পরে মেঘালয় পাহাড়ের ছায়া। আর চাঁদ উজাড় করে আলো ঢেলে দেয়। বাতাসে গান আর কবিতা উড়ে। স্বপনের মতো একটা শহর। এই শহরের সবাই সবাইকে চিনে। সবাই সবার আত্মীয়। সবাই আমার আত্মীয়।
পত্রিকায় দেখলাম একটা ঘটনা। আমার বিশ্বাস হতে চাইছে না। অথবা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে না। খুব আপন, নিজের ছেলে বা মেয়ে কোন অপরাধ করলে যেমন বাবা মা বিশ্বাস করে না তেমন অনুভূতি হচ্ছে আমার।
শুক্রবার সন্ধ্যা একদম খোলা জায়গায়, সবার সামনে বিশ্বজিৎ চৌহান নামে একজন যুবককে দুর্বৃত্তরা রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মারলো। কী নৃশংস! আমার জীবনে সুনামগঞ্জে এমন কোন ঘটনার কথা আগে শুনি নাই।
হ্যাঁ, ছোট-খাটো অপ্রীতিকর ঘটনা হয়। সুনামগঞ্জ তো বিচ্ছিন্ন কোন জায়গা না। তাই বলে এমন! কি করে সম্ভব, এমন দু:সাহস কি করে হবে কারো? কার প্রশ্রয়ে? কে এমন ক্ষমতাবান? সবাই সবাই কে চিনে। এই শহরে অন্তত শাক দিয়ে মাছ ঢাকা সম্ভব না।
আমি স্বপ্ন দেখি শেষ জীবন টা সুনামগঞ্জে থাকবো। একটা ছোট্ট কফি শপ সাথে আধুনিক একটা লাইব্রেরী করবো। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ছুটির দিনে বাচ্চাদের নিয়ে ছবি আঁকবো। এখন তো চিন্তিত হয়ে পরলাম। আমার শহর কি বদলে যাচ্ছে? অচেনা হয়ে গেলো!
মানুষ তো মরলোই কিন্তু যমে তো বাড়ি ও চিনে গেলো। একটা নৃশংস খুন হলো, তার হাত ধরে ধরে আর ও নৃশংস ঘটনা ঘটবে। ক্রোধ, হিংসা, প্রতিহিংসার বিষ ছড়িয়ে যাবে শহরের বাতাসে।
সুনামগঞ্জ এ আমার তরুণ বন্ধু আর স্বজন যারা আছো, তাদের আমি বলবো। সচেতন হও, কঠিন হও। এই বিষ ছড়াতে দিও না। আমাদের সুনামগঞ্জকে বদলে যেতে দিও না। লেখক : শিল্পী ও সমাজ সেবক
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন