রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৬:৫৭:৩৭

বাবা তুমি কবে আসবে!

 বাবা তুমি কবে আসবে!

পাঠকই লেখক: সময়টা আজ থেকে ৭বছর আগে। আমার বাবা তখন আমাদের সাথেই থাকতেন। পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মে আমার বাবা আমার কাছে ছিল সুপারম্যান-ব্যাটম্যান এর থেকে বেশি। বাবা যখন অফিসে যেতেন আমি ভাবতাম আমার বাবা সবার বস।

কারণ সে ছিল আমার কাছে সব থেকে বড়। তখন ঢাকায় আমরা নতুন এসেছি। বাবা সামান্য বেতনের চাকুরি করতেন যা দিয়ে সংসার টেনেটুনে চলত। কিন্তু সেটা বোঝার ক্ষমতা তখনও আমার হয়নি। আমার খুব শখ ঢাকার শহর ঘুরে দেখার।

বাবা মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে বের হতেন বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্যে। আমি বাবার একটা আঙ্গুল ধরে আবাক হয়ে সব কিছু দেখতাম আর সব আজগুবি প্রশ্ন করে বেড়াতাম। বাবা ক্লান্তহীনভাবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতেন। আমাকে কাধেঁ উঠিয়ে হেটেঁ বেড়াতেন।

নিজেকে তখন রাজা রাজা মনে হতো।

ছোটবেলায় আমি খুব জেদী ছিলাম। তো আমরা দুজন প্রায় ঘুড়তে যেতাম। তো একদিন আমি আর বাবা এক ফাস্টফুডের দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি ওই দোকানে র্বাগার দেখে খাওয়ার বায়না ধরি। আমি তখনও বুঝতাম না যে বাবার হাতে তেমন একটা টাকা থাকে না। তখন তার কাছে হয়তো ২-৪ টাকা ছিল। আমি খুব বেশি জিদ করায় আমার বাবা আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়েছিল। আমি বাসায় এসে কাদঁতে কাদঁতে ঘুমিয়ে পড়ি। একসময় সব ভুলেও যাই।

আমাদের দিকে তাকিয়ে বাবা দেশ ছাড়লেন। আজ আমার বাবা অনেক ভালো একটা দেশে থাকেন। আমার বাবা আমাকে বলছে যে, সে এই ৭ বছরে একটা বার্গার পর্যন্ত খায়নি। কারণ তার নাকি আমার কথা মনে পড়ে যায়। আজ ৭ বছর আমার সব থেকে ভালো বন্ধু আমার পাশে নাই।

জীবনের যে সময়টাতে বাবাকে বেশি দরকার ছিল তখন তাকে পাইনি। যখন এয়ারপোর্টের সামনে দিয়ে যাই শুধু ভাবি কবে আসবে কবে আসবে আমার বাবা। আজ অনেক বড় হয়ে গেছি। দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝতে শিখেছি। জানি বাবা আমার জন্যে যা করেছেন এবং করতেছেন সব নিঃস্বার্থভাবে। এতে কোনো খাদ নেই।

বাবার একটা ইচ্ছা, জীবনের কাছে আমি যেন হার না মানি। আমি এখনও হার মানি নাই। বাবার কথা মনে পড়লে সব কষ্ট ভুলে যাই। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। বাবা কবে আসবে। কলেজ শেষে আজ আমি এয়ারপোর্টে বসে থাকবো। অনেক মানুষের বাবা-আত্মীয়-স্বজন আসে। তাদের মিলন দেখবো আর আমার একটা দীর্ঘশ্বাস পড়বে সাথে চোখের পানিও।

লেখক: আধাঁরের আর্তনাদ (ছদ্মনাম)
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে