বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬, ০২:৩৪:১১

টাকার বিনিময়ে সাহিত্য চর্চা : চন্দ্রশিলা ছন্দা

টাকার বিনিময়ে সাহিত্য চর্চা : চন্দ্রশিলা ছন্দা

একটা রাষ্ট্র, একটা জাতির কখনো কোন দিনও উন্নতি অগ্রগতি সম্ভব নয় যদি ব্যক্তি সততা না থাকে। আগে ব্যক্তি সততা, তারপর জাতি এবং রাষ্ট্রের উন্নতি।

কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রায় প্রতিটি মানুষেরই সম্ভবত নৈতিকতা, সততার চরম অবক্ষয় চলছে আগের তুলনায় সম্ভবত অনেক বেশি আকারে।

অথচ সভ্যতার এই যুগে, মুসলমান হিসেবে আমাদেরও পৌঁছে যাবার কথা ছিল সততার বিরল কোন দৃষ্টান্তে। আজ আমরা সর্বোচ্চ কড়া ডোজের এন্টিবায়োটিক খেয়েও সর্দি-কাশির মত সাধারণ রোগও মাসের পর মাস সারাতে অক্ষম।

কারণ, সেখানে ঔষধেও ভেজাল! আজ দেশের রাস্তা-ঘাট নির্মাণ হলে একটা বর্ষা পার হয় না, আবার নষ্ট হয়ে যায়, ভাঙতে শুরু করে...কারণ অসততা, দুর্নীতি!

এভাবে ধাপে ধাপে প্রতি স্তরের মানুষের আজ পচন ধরেছে। সরকার প্রশাসন দিয়ে মানুষকে সঠিক পথে আনবে? সেখানে আরো বেশি অবক্ষয় আর দুর্নীতি! আমি, আপনি যদি সৎ না হই, বিবেকবান না হই…সরকার একজন একজন করে প্রতিটি মানুষকে ডির্টাজেন পাউডার দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে পারবে না।

তবে এই অবক্ষয়ের প্রধান কারণ-ই হয়তো হতে পারে দারিদ্রতা। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা মানুষকে ধীরে ধীরে বিবেক বর্জিত করে বলেই আমি মনে করি। তা নাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এবং শিক্ষকেরমত পবিত্র পেশাতে কেন পচন ধরবে!

তাই হয়তো সাহিত্য-সংস্কৃতির জায়গা গুলোও নীতি-হীনতায় ছেয়ে গেছে! ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে আজকাল বিভিন্ন সংগঠক-গন সাহিত্যের বিভিন্ন আয়োজন করছেন। এটা নতুন পুরাতন লেখক সাহিত্যিকদের জন্য খুবই উপভোগ্য একটা ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এর পক্ষে। এবং আমি নিজে আর্থিক অসচ্ছলতায় ভূগি বলে অনুভব করতে পারি সংগঠকদের ইচ্ছের সাথে, স্বপ্নের সাথে অর্থের ফারাক টা।

তাই যখন সংগঠন গুলো নিবন্ধনের জন্য কিছু টাকা নির্ধারণ করে দেন, তখন বুঝি তাঁদের হল ভাড়া, চা নাস্তার খরচ যোগাতে, কিংবা মাঠে সামিয়ানা এবং ডেকোরেশন থেকে চেয়ার-টেবিল ভাড়া করতে টাকার প্রয়োজন। আর এ জন্য স্পন্সর বা বিজ্ঞাপন যোগাড় করাও সব সময় তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সুতরাং পাঁচশ বা হাজার টাকা নিবন্ধন যারা নিচ্ছেন, তাঁরা নিক। যাদের দেয়ার সামর্থ্য আছে, তারা নিবন্ধন করে অনুষ্ঠানে যাবেন। সেখানে সাহিত্য নিয়ে অগ্রজ কবি সাহিত্যিকের বিভিন্ন আলোচনায় নিজেকে সমৃদ্ধ করবেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কবি লেখকের সাথে পরিচিত হয়ে নিজের প্রসার ঘটাবেন। স্বরচিত কবিতা পাঠের আয়োজন থাকলে কবিতা পাঠ করবেন...ব্যাস! এ-ও কম পাওয়া নয়।

কিন্তু নিবন্ধন না করলে অনুষ্ঠান কে কেন্দ্র করে প্রকাশিত একটা পত্রিকা বা সঙ্কলনে অ-নিবন্ধিত কোন কবি বা গল্পকারের লেখা প্রকাশ করা হবে না…এটা তো খুবই ঘৃণ্য শর্ত বলে আমি মনে করি। নানান কারণে কোন ভালো লেখকের নিবন্ধন ছুটে যেতে পারে।

কিন্তু তিনি লেখা জমা দিয়েছিলেন, ওদিকে নিম্ন মানের লেখা নিয়ে অতি উৎসাহিত লেখক নিবন্ধনের কারণে পত্রিকায় জায়গা করে নিলো…এটা খুবই দুঃখ এবং হতাশা জনক। বরং লেখার ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে বাছাইকৃত লেখা পত্রিকা বা সঙ্কলনে আসুক।

আর সততা, দৃঢ়তা এবং বিনয়ের সাথে অযোগ্য লেখক কে বলে দেওয়া হোক, আপনি আরো ভালো লেখার চেষ্টা করুন, আমরা আগামীতে আপনার লেখা ছাপবো। আপনি আমাদের অনুষ্ঠানে সানন্দে যোগ দিতে পারেন। এবং যোগ দাওয়া না দাওয়া তাঁর ব্যাপার।

ভালো লেখার সাধনা থাকলে, লেখক হবার সাধনা থাকলে সেই অ-লেখক সমস্ত ব্যাপারটাকে পজেটিভলি নিবেন। আগামীতে ভালো করার চেষ্টা করবেন। অথবা সরে দাঁড়াবেন লেখার জগত থেকে।

কিন্তু টাকার বিনিময়ে লেখা ছাপানো মানেই সেই মহান সংগঠক কে কিনে নেয়া নয় কি? বিবেকের কাছে নীতির কাছে ক্ষুদ্র হয়ে থাকা নয় কি? টাকার বিনিময়ে অ-লেখক কে সম্মানিত করা এবং ভালো লেখকে কে হতাশায় ফেলে দাওয়া।

সুতরাং আমি আশা করব এবং আহ্বান করব প্রথমে লেখকদের, যে আপনারাও উদার হতে শিখুন। একহাজার টাকা দিলাম, কিন্তু লেখা ছাপলো না…এই কষ্ট কে জয় করতে শিখুন। নিবন্ধন করুন, অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। আরো ভালো লেখার চেষ্টায় বিলিয়ে দিন নিজেকে। লিখতে লিখতে পত্রিকায় লেখা আসুক আরো ৫-৭ বছর পর। তবু সাধনা করতেই থাকুন।

সংগঠক-গণ, আপনাদের বলছি, আপনারা সৎ হন। নিজের কাজের সাথে নীতির সাথে আপোষ নয় এই ব্রত থাকুক আপনাদের। সচেতন হন। এবং দয়া করে সাহিত্য কে বাঁচতে দিন। এমনিতেই মেধা-চাষিদের পরিশ্রমের কোন পারিশ্রমিক নেই। তার উপর টাকার বিনিময়ে লেখা ছাপিয়ে সত্যিকারের লেখক নিধন করবেন না।

সুতরাং ওই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসুন। চেষ্টা করুন বিজ্ঞাপন এবং স্পন্সর যোগার করতে। সঠিক পন্থায় সাহিত্যকে লালন করুন।

আমি কথা দিচ্ছি, কোন পত্রিকা আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে আমি যদি নিবন্ধন করি এবং লেখা জমা দিই, তবে লেখার মান ভালো না হলে দয়া করে সে লেখা ছাপাবেন না। আমার শরীর-মনে কুলালে আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করব। মনে করব ওটাই অনেক প্রাপ্তি।

 নিবন্ধনের কল্যাণে লেখা ছাপিয়ে এক অহংকারী কবি হয়ে দু’দিন বাদে ঝরে যাওয়ার কোন মানে হয় না। দয়া করে আমাকেও বোঝার সুযোগ দিন আমি কি লিখছি। আমার মান কি রকম। আশা করি আমার সাথে আপনিও থাকবেন। লেখক : কবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে