সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪৪:০১

‘আমাদের স্যার আমরা মারব’

‘আমাদের স্যার আমরা মারব’

সাম্য শরিফ : গল্পটি কলেজ জীবনে শোনা। কোনো এক প্রসঙ্গে একজন স্যার গল্পটি করেছিলেন। তিনি তখন অন্য এক কলেজে শিক্ষকতা করতেন। সেই কলেজের একজন শিক্ষকের সঙ্গে একজন ছাত্র দুর্ব্যবহার করে। যাকে বলে গায়ে হাত তোলা। ঘটনার রেশ অনেক দূরে যায়। সেই শিক্ষক স্থানীয় হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে এলাকাবাসী বনাম ছাত্র এরুপ মেরুকরণ হয়ে যায়। বেশ উত্তেজেনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত একটি ছাত্র সমাবেশে একজন ছাত্রনেতা তার বক্তব্যে বলেন, ”আমাদের স্যার আমরা মারব, বাইরের লোকের কি?” আসলেইতো তাই। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সোনার বাংলার সোনার ছেলেরা না হয় তাদের নিজেদের স্যারদের একটু মেরেছে, বাইরের কেউতো মারে নি!

কোনো এক সময় সাকা চৌধুরীর সোনাদানা সম্পর্কিত এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দৈনিক প্রথম আলো একটি কার্টুন প্রকাশ করেছিল। কার্টুনে প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছিল , শ্লীল আর অশ্লীল এর ভেতর পার্থক্য কি?’ উত্তরটি ছিল, ’পার্থক্য এক সময় ছিল, এখন আর নেই’। সত্যিই কি সন্মান, অসন্মানের পার্থক্য এখন আছে? প্রফেসর আনু মুহাম্মদকে যখন রাজপথে একজন ক্রিমিনালের মত লাঠি পেটা করা হয় এবং তার কপাল ফেটে রক্ত ঝরে তখন সন্মানের উর্ধগতি না অবগতি হয় তা বলা কঠিন। ড. ইউনূস নোবেল বিজয়ী হয়ে আমাদের জন্য জাতীয়ভাবে সন্মান বয়ে এনেছেন। তারপরই তার নিজের সন্মান হয়ে গেল ’ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’। লাল পানি নিল পানির ব্যাখ্যাও শোনা গেল।

আসলে সন্মানতো একটা সংস্কৃতি। সেই সচিবালয়ের কর্মকর্তাকে দিগম্বর করা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেটানোকে রাজনৈতিকভাবে না দেখে জাতীয়ভাবেই দেখা উচিৎ। কোনো লোককে রাজপথে দিগম্বর করা হবে, ছাত্ররা শিক্ষকদের পেটাবে, একাজগুলো যারা করে তারাতো এদেশেরই সন্তান। তাদেরও পরিবার আছে, শিক্ষক আছে, বটগাছের মত নেতা আছে, তাহলে এ অসন্মানের কালচার তারা কোথায় পায়? আমরা কি জাতীয়ভাবেই সন্মান জিনিসটাকে উপেক্ষার একটা ব্যাপারে পরিণত করতে উদ্ধত হয়েছি। তাহলে এখনই সময় জাতীয় তেল গ্যাস সুরক্ষা কমিটির মত একটা জাতীয় সন্মান রক্ষা কমিটি করা! সন্মান বিষয়ক একটা নতুন মন্ত্রনালয়ও খোলা যেতে পারে!

একজন সন্মানীয় ব্যক্তিই কেবল সন্মানের মুল্য বুঝবেন। তবে সভ্য একজন মানুষের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে একজন রিকসাওয়ালা কিংবা দিনমজুর শ্রমিক বা কৃষক কেউই অসন্মানীয় নয়; হোক সে প্রতিপক্ষ। জাতীয়ভাবে সন্মানবোধ এবং সন্মানের প্রতি সন্মান না থাকলে এরুপ ঘটনা এক সময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ সমস্যাটি রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক। আমরা কি একটি বিশেষ সংস্কৃতিতে প্রবেশ করতে চলেছি? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনের একটা ঘটনা। একটা ছেলে ক্লাসরুমে একটি মেয়েকে লক্ষ্য করে চক ছুড়ে মারে। স্যারের চোখের সামনে দিয়ে চকটি সেই মেয়ের উপর যেয়ে পড়ে। স্যার এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন, ’তোমরা কে কাজটি করেছ জানিনা। তবে যেইই করে থাকো তোমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছ, কেউ ফ্যামিলির পরিচয় দিতে এসোনা’। আমরা কি আমাদের পরিবারগুলো ঠিক করবো না? নাকি আমাদের স্যারদের আমরা মারতেই থাকব?
সাম্য শরিফ, ই-মেইল: [email protected]
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে