বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:০৫:৪৬

বাড়ি থেকে বারব্যাডোজ

বাড়ি থেকে বারব্যাডোজ

আবু এন. এম. ওয়াহিদ: বিকেল সাড়ে ছ’টায় ফ্লাইট। পিকআওয়ার-ট্র্যাফিক ঠেলে এয়ারপোর্ট যেতে সময় লাগবে আধঘন্টার জায়গায় একঘন্টা। চেকইন এবং সিকিউরিটির পুলসেরাত পার হতে দেড়ঘন্টাই যথেষ্ট, তাই ঠিক করলাম চারটায় রওয়ানা দেব। আমার ছেলে, আসাদ ড্রাইভ করবে, বেগম সা’বও সাথে থাকবেন। ফেরার পথে দোকানে তাদের কেনাকাটা আছে। সবকিছু পরিকল্পনা মতই হল, কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইন্টারস্টেটে উঠেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। রাস্তায় জ্যাম, ঢাকার মতই গাড়ি চলছে কচ্ছপগতিতে। অবস্থা বেগতিক দেখে আসাদকে বললাম, বাবা, হাইওয়ে ছেড়ে লোকাল রাস্তা ধর। কোন পথে যাবে তাও বলে দিলাম। সে তাই করল । লাভ খুব একটা হল না । সেদিকে ভীড় কম বটে, কিন্তু হাজারো ট্র্যাফিকলাইটের বাধা পেরিয়ে গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। সময় যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে ট্র্যাফিক এবং তার সাথে আমার অস্থিরতা।
আসাদ বলল, ‘‘আব্বু, চিন্তা কর না, তোমাকে আমি সময়মতই পৌঁছে দেব’’। আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আমায় উসখুস করতে দেখে আমার ছেলে তার প্রত্যাশা ব্যক্ত করল, ‘‘তুমি এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখবা তোমার ফ্লাইটে ডিলে আছে’’। ছেলের কথায় ধৈর্য ধরে শান্ত হয়ে বসলাম, এতে তার গাড়ি চালাতে একটু সুবিধা হল। অবশেষে এয়ারপোর্টে নামলাম। সময় লাগল হিসেবের চেয়ে মাত্র পনেরো মিনিট বেশি। চেকইন কাউন্টারে গিয়ে দেখি আসাদের কথাই ঠিক, ফ্লাইট দু’ঘন্টা ডিলে। এবার পড়লাম অন্য চিন্তায়, টরেন্টো গিয়ে ইমিগ্রেশন- কাস্টমস্ সেরে, শাট্ল ধরে হোটেলে উঠতে উঠতে রাত সাড়েবারো, এমন কি একটাও বেজে যেতে পারে। সকালে বারব্যাডোজগামী কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে ভোর ছ’টায় বেরিয়ে পড়তে হবে, তার জন্য উঠতে হবে সাড়ে পাঁচটায়। তার মানে রাতে আর ঘুম হবে না, ব্যাস!


এ-তো সবই মেনে নিলাম, তারপরও ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’-যে কপালে আরো ছিল, তখনো আঁচ করতে পারিনি। টরেন্টোতে নেমে যখন শাট্ল ধরার জন্য বাইরে এসে দাঁড়ালাম, তখন ঘড়িতে বাজে রাত বারোটা, আর ঠা-ায় আমার নিজের বাজল বারোর ওপর তেরোটা। মাথায় উলের টুপি, গলায় স্কার্ফ, পায়ে জুতো তো আছেই, তার ভেতর ঘন গরম মোজা, প্যান্টের নীচে থার্মালআন্ডারওয়ার, বুকে-পিঠে চারপ্রস্ত কাপড়, এতকিছু নিয়েও থরথর করে কাঁপছি। মার্চ মাসের শেষে টরেন্টোর এই জমে-যাওয়া শীত দেখে আমি তো একেবারে হতবাক! অপেক্ষা করছি আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি - দশ মিনিট, বিশ মিনিট, তিরিশ মিনিট, শাট্ল তো আর আসে না, অথচ তাদের কথামত আধঘন্টা পরপর চলার কথা। আমি স্যুটকেস খুলে আরেকটা সুয়েটার বের করলাম, জ্যাকেট খুলে সেটাও পরলাম, তারপর আবার জ্যাকেট গায়ে চড়ালাম।
এমন সময় দেখি একটি মেয়ে গুটিসুটি মেরে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে একটা পাতলা ট্রাউজারের সাথে স্লিভলেস গেঞ্জি। তার মাঝে কোনো অস্থিরতা নেই, তবে ঠা-ায় যে একেবারে কাবু হয়ে আছে তা বোঝা যাচ্ছিল। গোলাপি ঠোঁটযুগল নীল বর্ণ ধারণ করেছে। একটুখানি উষ্ণতা পাওয়ার আশায় মা’র গা ঘেষে যবুুবু হয়ে আছে। দেখে অবাক হলাম যে, জগতে এমন বেকুবও আছে!
প্রায় একঘন্টার পর অবশেষে শাট্ল এল। পনেরো মিনিটের মধ্যেই হোটেলে পৌঁছে গেলাম - আমার প্রিয় হলিডে ইন এক্সপ্রেস! রিসিপশনে দেখলাম দুই তরুণ। আমার সাথে হোটেলে অন্য অতিথি যাঁরা ছিলেন তাঁরা ওদের সাথে রাগারাগি করলেন, শাট্ল কেন এত দেরি করল? আমি শুধু যোগ করলাম, এমন দেরি জানলে ট্যাক্সি নিতাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দেড়টা বাজে। কথা না বাড়িয়ে চেকইন সেরে কার্ড কি নিয়ে উপরে উঠে গেলাম। তার আগে ভোর সাড়ে পাঁচটায় ওয়েকআপ কলের অনুরোধ জানালাম এবং বললাম, শ্যাল আই ডিপেন্ড


অন ইউ? ছেলেটি হেসে বলল, ‘‘শিওর’’। রুমে গিয়ে দেরি না করে নরম বিছানায় সুখের আশ্রয় নিলাম। ঘন্টা তিনেক পরে সোয়া পাঁচটার দিকে আপনা থেকেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে, বাথরুম সেরে, কাপড়চোপড় পরে বেরিয়ে যাব এমন সময় দরজায় ঠক্ঠক্ শব্দ, কে যেন বলছে, ‘‘ওয়েকআপ কল, ওয়েকআপ কল’’। ডিজিট্যাল যুগে এমন ম্যানুয়েল ‘ওয়েকআপ’ কল শুনে হাসি পেল। মুখে হাসির রেশ নিয়ে স্যুটকেস টেনে হুলস্থূল করে নেমে দেখি আমার নাকের ডগার ওপর দিয়ে ছ’টার শাট্ল এয়ারপোর্টের দিকে চলে গেল। দু’তালা থেকে একতালায় নামতে নামতে মুখের হাসি হাওয়ার মিঠাইর মত মিলিয়ে গেল। ঘড়িতে কিন্তু তখনো ছ’টা বাজেনি। আমার একটু রাগ হল, রিসিপশনের ছেলে
দু’টোকে বললাম, তোমরা আমাকে এখনই এয়ারপোর্ট পাঠাবার ব্যবস্থা কর। আমি তো সময়মতই নেমেছি, তোমাদের শাট্ল আগে চলে গেছে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে এদিক-ওদিক ফোন করতে লাগল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে অন্য এক হোটেলের আরেকটা শাট্ল ও’পথে যাওয়ার সময় আমাকে তুলে নিল। এয়ারপোর্টে সময় মতই আসলাম, কিন্তু লাগেজ চেকইন করতে আরেক ঝামেলায় পড়লাম। এয়ার কানাডার চেকইন ক্লার্ক আমার কাছে পঁচিশ ডলার ফি চাইল। আমি বললাম, চেকইনে দেব না, স্যুটকেসটা আমি সাথে করে ক্যাবিনে নিয়ে যাব। তারপর মেয়েটি বলল, ‘‘তোমার সঙ্গে কোনো কাঁচি আছে?’’ ছোট্ট একখানা আছে বটে, কথাটা শুনেই তার গলায় জোর বেড়ে গেল, ‘‘ফি দিয়ে চেকইন করতেই হবে’’। মনে মনে বললাম, পারমাণবিক বোমার পাহাড় গড়েছ, অথচ আড়াই ইঞ্চি একখানা কাঁচিকেও ভয় পাও, এই তোমাদের বাহাদুরি! বড় ভাবনার মাঝে জরুরি ছোট কথাটা ভুলে গেলাম। কাঁচিটা স্যুটকেস থেকে বের করে ফেলে দিতে পারতাম, তা না করে জরিমানা গুনেই হাজারো যাত্রীর সাথে
সিকিউরিটির লাইনে গিয়ে যোগ দিলাম।


এত পেরেশানির পর গে’ট এরিয়াতে এসে দু’দ- বিশ্রামের সুযোগ পেলাম। সময়মত যথারীতি বিমানে উঠে দেখি তিনভাগের একভাগ সিট খালি।
সিটবেল্টের হলুদ বাতি নিভে গেলে মাঝখানের এক রো-তে হাতা তুলে শুয়েবসে আরাম করে গেলাম। এক সময় ঘুমোবার চেষ্টা করে কোনো ফল
পেলাম না। তার আগে আমার নির্ধারিত সিটের সামনের সারিতে বসা এক শ্বেতাঙ্গ মহিলার সাথে পরিচয় হল। তিনি বারব্যাডোজ-এর নাগরিক।
ঔপনিবেশিক যুগে তাঁর পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন ইউরোপ থেকে। ১৯৬৬তে যখন দেশ ¯া^ ধীন হয় তখন তাঁরা আর স্বদেশে ফিরে যাননি। রয়ে গেছেন বারব্যাডোজ-এ। বারব্যাডোজ-কে ভালবেসে নিজেদের দেশ করে নিয়েছেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, তাঁর মত আরো মানুষ কি বারব্যাডোজ-এ এখনো থাকেন। বললেন, ‘‘অনেক’’। এ কথা শুনে আমার মনে হল, এক সময় ভারতবর্ষের তিরিশ কোটি মানুষকে শাসন করেছে দু’লাখ ইংরেজ। ১৯৪৭এর পরপরই এদের প্রায় সবাই তো ফিরে গেল সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। বারব্যাডোজ-এর মত করে তো তেমন কেউ রয়ে গেল না ভারতে, কিংবা পাকিস্তানে, কিংবা বাংলাদেশে। তার মানে কি আমরা খুব অসহিষ্ণু জাতি? নাকি অন্য কিছু?
বারব্যাডোজ-এ ‘জিকা’ ভাইরাস-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে আমার কিছু ভয়ভীতি ছিল! ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপকালে সে ভয় কেটে গেল। তিনি আমাকে অভয় দিলেন, আস্বস্ত করলেন। পাঁচঘন্টা উড়ালকালে বিমানে দু’বার ঠা-া-গরম পানীয় দেওয়া হল। একবার একটা ভেজিটেবল ফেলাফেল কিনে খেলাম। মনে পড়ল তিরিশ বছর আগের কথা। উইনিপেগের ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে মিসরীয় ব্রাদার হেলমির দোকানে প্রমবারের মত খেয়েছিলাম ফেলাফেল। সেটা ছিল ফ্রেশ রুটির সাথে তেলে ভাজা গরম গরম


তাজা ফেলাফেল, কচিঁ শশা দিয়ে। সে ছিল স্বাদে অতুলনীয়! ঠা-া বাসি খাবারে কি আর সেই মজা পাওয়া যায়? এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো।
অবতরণের সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখন সিট খালি দেখে এক জানালার পাশে গিয়ে বসলাম, ওপর থেকে বারব্যাডোজ-কে কেমন লাগে দেখার জন্য। নীচের দিকে তাকিয়ে গভীর নীল পানি দেখছি, দেখছি ছোট ছোট ঢেউ, ঢেউএর মাথায় সাদা সাদা ফেনা শিং-খাড়া ষাঁড়ের মত এলোপাথাড়ি ছুটোছুটি করছে। ঘাড় বাঁকা করে এক পলকে তাকিয়ে আছি - তো আছিই। স্বপেড়বর মত হঠাৎ মনে হল পানির তলদেশ থেকে সাগরের বুকে ভেসে উঠল একটা ছোট্ট গ্রাম, নীচে নামছি, দৃষ্টিসীমা প্রসারিত হচ্ছে, বাড়ছে গ্রামের পরিধি, বাড়তে বাড়তে গোটা দেশটাই যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল চোখের সামনে। বিমান মাটি ছুঁই ছুঁই, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পুরো একটা দেশ আমার নজরে, যেন হাতের মুঠোয়। এমন চাঞ্চল্যকর ও উত্তেজনাপূর্ণ অনুভূতি আগে কখনো হয়নি! হলেই বা কী? দেখা এক জিনিস আর জানা আরেক জিনিস। যে বারব্যাডোজ আমি মিনিটের মধ্যে দেখে ফেললাম, সে বারব্যাডোজ-কে, তার মানুষ, সমাজ, ও সভ্যতাকে জানতে গেলে আমার বছরের পর বছর সময় লাগবে, চেনাজানা তাও শেষ হবে না। দেখা এবং জানার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক আছে অনেক সময় তা আমরা বুঝি না, আর বুঝি না বলে কোনো
কোনো সময় অসুবিধাও হয়। ওই সময় আরো মনে হল সেইন্ট লুশা-র কথা। সেটা আরেকটা ক্যারিবিয়ান দেশ। সেদেশে আমি আগে গিয়েছি। সেটা ঘন জঙ্গল আর উঁচু উঁচু পাহাড়ে ভরা। সে তুলনায় বারব্যাডোজ সমতলে বিছানো একটি দেশ, সামান্য একটু টিলাটিলি আছে বটে, কিন্তু বনজঙ্গল তেমন একটা নেই। এ রকম ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি বারব্যাডোজ চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেল, বিমান স্থির হয়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট একটি


টার্মিন্যালঘর। সবার সাথে লাইন ধরে গিয়ে উঠলাম সে ঘরে। ঝামেলা ছাড়া অতি সহজে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস্ পেরিয়ে এলাম। বাইরে সুন্দর রোদ ঝল্মল্ দুপুর, তবে ভীষণ গরম। গা থেকে কাপড়-চোপড় একটু কমালাম। গিয়ে উঠলাম ট্যাক্সিতে। ট্যাক্সি চলছে আর আমি দু’চোখ ভরে দেখছি নতুন দেশ, বারব্যাডোজ। চারদিকে অথৈ সাগর, নীল জল, রাশি রাশি, তবু দেশটা কেন যেন মরুভূমির মত লাগছে। গাছপালা বেশি নেই, নেই সবুজের চাকচিক্য। ঘাস আর আগাছায় ভরা মাঠের পর মাঠ অনাবাদি পড়ে আছে, বৃষ্টির অভাবে তৃণগুল্মের অহাজারি বাতাসকে ভারী করে ফেলেছে। আরব দেশ হলে পানি ছিটাতো, বারব্যাডোজ-এর কি আর সে সামর্থ আছে? পরিবেশবিদদের ভয়, দিয়াশলাইর একটি কাঠির ঘষা লাগলেই সব পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। এ যেন পানিতে ভাসমান কচুরি পানা, পানিরই অভাবে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
রস্তাঘাটের অবস্থা খুব ভাল নয় - আছে, মোটামুটি। চলতে চলতে এক সময় লোকালয়ে চলে এলাম। হঠাৎ রাস্তার পাছে গাড়ড় থাড়ছিে ট্যাক্সি ড্রাইভার নামলেন এক দোকানে, আমিও তাঁকে অনুসরণ করলাম। দোকানি এক ভারতীয় মহিলা। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি ভারতীয়? বললেন, তিনি গায়ানিজ, মনে মনে ভাবলাম, ওই একই কথা। আরো মনে হল, আদম-হাওয়া (আঃ) যখন পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, তখন একটা মাত্র ক্ষুদ্র জায়গায় তাঁরা বসত করেন, বংশবিস্তার শুরু করেন। তারপর কালের আবর্তে আদমসন্তানেরা বিভিনড়ব জাতিতে বিভক্ত হয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। গড়ে তুলে স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্র। এখানেই শেষ নয়। কোনো এক সময় তারা আবার উনড়বত জীবনের সন্ধানে স্ব স্ব দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাতে শুরু করে ভিনড়ব ভিনড়ব দেশে। এভাবে জনবসতির ওলটপালট, অদলবদল চলতে থাকে, এবং চলবে অনাদিকাল ধরে, ¯্রােতের তোড়ে
গড়িয়ে যাওয়া নদী-জলের মত। শেষ পরিণতি কী হবে? আল্লাহ্ই মা’লুম।


দোকান থেকে এক বোতল পানি কিনলাম, কলাও নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পেলাম না। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হোটেল র‌্যাডিসন-এ এসে হাজির। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে তাঁর পাওনা চুকিয়ে দিয়ে বাক্সপেটরা নিয়ে লবিতে আসলাম। চমৎকার লবি এরিয়া। এমন হোটেল-লবি আগে আর কোথাও দেখিনি। দু’পাশটা পুরো উন্মুক্ত। পশ্চিম দিক থেকে সাগরের শিরশিরে শীতল বাতাস বাধাহীনভাবে লবিতে ঢুকে হুঁ হুঁ করে পূব দিকে বেরিয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে সবাই বুক ভরে টেনে নিচ্ছে নির্মল হাওয়া। আমার কাছে মনে হল সফরের সমস্ত ক্লান্তি যেন নিমেশে দূর হয়ে গেল। রিসিপশন ক্লার্ক জানালেন, আমার রুম রেডি হয়নি। সোফায় বসতে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যে একজন বেয়ারা আমাকে দিয়ে গেল এক গ্লাস ফ্রুটপাঞ্চ। এমন মজাদার পাঞ্চ আমি ইতিপূর্বে কোথাও খাইনি। অনুভূতি এমন হল, যেন যতদিন বারব্যাডোজ-এ থাকব ততদিন আমার আর তৃষ্ণা পাবে না।
লবিতে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। সবার আগে যে জিনিসটা আমার দৃষ্টি কাড়লো তা একটি অচেনা বড় ফুল গাছ। গোড়াটা কাঁঠাল গাছের মত
একেবেঁকে ওপর দিকে উঠে গেছে, এবং পাতাগুলো ছাতিমের মতন। সবুজের মাঝে সাদা ফুল রোদের আলোয় হীরের মত চমকাচ্ছে। গাছটা যেন অনুমতি ছাড়া বাহির থেকে এসে লবির ভেতরে ঢোকার জন্য অস্থির হয়ে আছে। শরতের ভোরবেলা যেমন গাছতলায় শেফালি শোভা পায় তেমনি অসংখ্য মাঝারি আকারের সাদা সাদা তাজা ফুল চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গাছের নীচে। একটা তুলে দেখলাম মাঝখানটায় হালকা হলুদ রেখা, নাকের কাছে নিয়ে শুঁকলাম। ঘ্রাণ আছে, তবে গোলাপের মত নয়। লবি থেকে দু’কদম বেরিয়ে গিয়ে বাগানের মালির কাছে গাছটির নাম জানতে চাইলাম। আমাকে বলল, ‘‘ডেজার্ট রোজ’’, অর্থাৎ মরুভূমির গোলাপ। ঝরেপড়া গোলাপটা হাতে নিয়ে একাকি এক কোণে এসে বসলাম লবির চেয়ারে। খোলা লবি দিয়ে পশ্চিমে নজর গেল সাগরের দিকে। সামনে বিশাল নীল জলরাশি। দেখতে দেখতে আঁখি


দু’টি ক্লান্ত হয়ে আসে, তবু দৃষ্টি ফেরাবার নয়। বিষনড়ব মনে বসে ক্ষণে ক্ষণে ভাবি, কোথাকার মানুষ, কোথায় থাকি, আর বউ-ছেলে-মেয়ে ছেড়ে এখন কতদূর, কোথায় এসেছি! ভাবলাম, আমিও তো জন্মাতে পারতাম ছোট্ট এ দ্বীপদেশে, হতে পারতাম এঁদেরই একজন!
- অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি;
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ
১৪ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে