সোহেল রানা: ইসলাম সাহেব তার ছেলেকে নিয়ে যতটা বিরক্ত তার চেয়ে দ্বিগুণ বিরক্ত তার একমাত্র নাতিটাকে নিয়ে। তিনি নিজে এক সময় সরকারী অফিসার ছিলেন। তিনি সব সময় বাবা মার দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। প্রতি ঈদে বাবার সাথে পশু কিনতে হাটে গিয়েছেন, একসাথে নামাজ পড়েছেন। তার ছেলে ছোট বলা থেকেই হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছেন।
তাই পারিবারিক ঘনিষ্টতার ব্যাপারগুলো খুব একটা ফিল করেন না। তার উপর পেশায় একজন এফ সি এ। কারো পানে চাহিবার নাই যে সময় তার। তার ছেলে আব্রার একটি নাম করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে এবার এ লেভেল দিবে। আচরণে পশ্চিমা কালচার, অস্থির ডিজিটাল এক উঠতি যুবক সে।
ইসলাস সাহেব এবছরের কোরবণী পশুকেনার দায়িত্ব দিয়েছেন নাতি আব্রার এর উপর। পরিবারের সবার আপত্তি সত্ত্বেও এ সিদ্ধান্ত থেকে তাকে কেউ ফেরাতে পারল না। কারণ তিনি যুক্তি দিলেন -ওদের এসব শিখতে হবে।
যেমনি কথা ওমনি কাজ বাড়ির কেয়ারটেকার ছামাদকে নিয়ে আব্রার কোরবানীর হাটে। ওর মতই নাদুস নুদুশ বেশ মোটাতাজা দেখে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে এক হাম্বা কিনে বাসার দিকে রওয়ানা দিল। আর বলছে দেখেছেন ছামাদ আংকেল দাদু মনে করেছিল আমি পারবো না। হা হা। বাজার থেকে কাদাটাদা মাখিয়ে হাটতে হাটতে মেইন রাস্তায় উঠে বলল ছামাদ আংকেল দাঁড়ান আমি একটা Cowfi নেবো। ছামাদ বলে colfi নিবেন? এখানে তো নেই?
Oh,no man Cowfi, cowfi. আমি হাম্বাটার সাথে একটা পিক নেবো। একটু পরে sunset হবে pic ভালো আসবেনা। আপনারা সরে দাঁড়ান। me n cow. বলে আব্রার যেই ওর মোবাইলটা বের করে ছবিটা তুলবে ঠিক ওই টাইমে গলির এক দুষ্ট ছেলে চকলেট বোম একটা পেতে রেখে চলে গেল। আব্রার যেই পিক ক্লিকাইছে ওমনি বিকট আওয়াজে বোম ফুটল। আর আসল বিপত্তিটা এখান থেকেই শুরু।
১লাখ ৮০ হাজার টাকার গরু মারল এক পাগলা দৌড়। শুধু কি দৌড়, সেই সাথে যাকে পায় তাকেই গুতা মারে। সবাই তার বাহাদুরি দেখে রাস্তা ফাঁকা করে দিল। এবার গরুর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আব্রার আর ছামাদের অবস্থা কাহিল। এক সময় যেই গরুটাকে ধরবে ধরবে ভাব ঠিক তখনই গরু পাশের রাস্তার দিকে এক লাফ দিয়ে পর হতে গিয়ে পড়ে গেলো সিটি কর্পোরেশনের এক গর্তের মধ্যে। কী মুশকিল!
এবার হাপাতে হাপাতে আব্রার তার দাদুকে ফোন দিল। দাদু সব শুনে বলল আমি জানতাম তুই এরুপ একটা কাণ্ড না করে বাসায় ফিরবি না। দাঁড়া দেখছি কি করা যায়। লোকেশান বল আমি ফায়ার ব্রিগেটকে বলছি। যেমনি কথা ওমনি কাজ কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার ব্রিগেডের রেসকিউ বিভাগ হাজির। অনেক চেষ্টা করে তারা হেড অফিসে রিপো্র্ট করল গর্ত ছোট উদ্ধার সম্ভব নয়। রাস্তা কেটে জায়গা বের করা গেলে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। শেষমেশ তাই হল। আসল মেশিন শুরু হলো রাস্তা কাটা।
এদিকে বাসায় বসে গরু উদ্ধারের লাইভ অনুষ্ঠান দেখছেন ইসলাম সাহেব। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা থেকে রাত গভির হয়ে গেলো এখনো গরু উদ্ধার হলো না। অবশেষ রাত ১২ টা ১ মিনিটে উদ্ধার করার পর ক্লান্ত ছিলে ছুলে যাওয়া গরুকে নিয়ে আর কারো কোনো উৎসাহ উদ্দিপনা দেখা গেলোনা। ভীড় বাঙ্গালী রাস্তা ফাঁকা করে যার যার কাজে ফিরে গেল।
উদ্ধার টিমের প্রধান একজন সৈনিককে বলল শক্ত করে রশি ধর আঘাত পাওয়া গরু হঠাৎ আবার ছুটতে পারে। না স্যার কি যে বলেন ছোট বেলায় কত গরু পালছি। সৈনিকটা কথা শেষ না করতেই সত্যি সত্যি গরুটা ফের এমন জোড়ে দৌড় দিল যেনো সৈনিকটার প্রতি টেনে হিঁচড়ে উদ্ধারের শোধ নিচ্ছে। পিছনে পিছনে একদল গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিল অপর গ্রুপ ঐ সৈনিককে হাসপাতালে ভর্তি করল।
এদিকে গরু আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মালিক পক্ষের ঠিকানা ও সাইন নিয়ে বাসায় উদ্ধারকৃত মাল পৌছে দেয়া হবে বলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এবার উদ্ধার টিমের প্রধানের আরাম হারাম হয়ে গেল। গরু কোন রাস্তার কোন গলিতে ঢুকে গেছে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে হেড অফিসে উদ্ধারের সকল প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। কী যে বিড়ম্বনা। নিকটস্থ থানার হেল্প চাওয়া হয়েছে। এদিকে প্রায় ভোর হয়ে আসছে। থানার অফিসার আর রেসকিউ অফিসার দুজনের ঘুম নাই। আচমকা একটা ফোন আসল রেসকিউ অফিসারের ফোনে স্যার গরুটা পাওয়া গেছে। যাক হাফছেড়ে বাঁচলেন অফিসার।
থানায় নিয়ে আসা হলো অতি বিপ্লবী গরুটিকে। ডাকা হলো মালিকদেরকে। আসল মালিকপক্ষ। কিন্তু সমস্যার সমাধান হলো না। কারণ থানা পুলিসের ঝামেলা দেখে ইসলাম সাহেব - এটি যে তার গরু তা অস্বীকার করলেন। ফায়ার হেড অফিসে এ ব্যাপারে রিপোর্ট করা হলে সিদ্ধান্ত আসল এরকম গরুটি উদ্ধার টিমের প্রধানের দায়িত্বে সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত থাকবে। গরুর মালিককে অারেকটি গরু কিনে কোরবানী করতে বলা হলো। একটি Cowfi অনেক বিড়ম্বনার কারণ। অতএব Cowfi হতে বিরত থাকুন।
(সম্পাদক দায়ী নয়)
এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস