মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু (সিঙ্গাপুর প্রবাসী): তনু হত্যার বিচারের দাবিতে খুব মাতামাতি করেছিলাম যেমন করেছিলাম গণ জাগরণের শুরুতে। গণজাগরণের শুরুতে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ব্যানার করে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম সিঙ্গাপুর থেকে। সারা বিশ্বের মধ্যে সর্ব প্রথম আমরাই গণ জাগরণের জোয়ারে মেতে উঠেছিলাম। জ্বালিয়ে মোমবাতি, মুসলিম হয়ে অগ্নি পুজোয় মত্ত হয়েছি এক অজানা বাঁধ ভাঙা উল্লাসে। একটা নতুন সৃষ্টির উল্লাসে। ভেবেছিলাম একটা ঝাঁকুনি দেবার সময় বুঝি এসেছে। অনেক বন্ধু ফোনে, ইনবক্সে এবং সরাসরি বলেছে। তুই একটা পাগল। যে কোন বিষয়ে তাড়াতাড়ি রিয়েক্ট করিস। দেখবি সব সাজানো। যা হোক গণ জাগরণের ঘনত্ব কমে গেলেও কিংবা ফরমালিন যুক্ত অথবা রাজনীতির মিল্ক শেক হলেও আতুর ল্যাংড়ার মতো চলছে। এখনো ,যেহেতু বাম দল থেকে উত্পত্তি তাই বাম ঘরণারা এখনো গনজাগরনের ঘ্রান নিচ্ছেন মাঝে মাঝে। যখন কেউ চাবি দেয় তখনি একটু নড়ে উঠে।
তনু হত্যার প্রতিবাদে একধিক পত্রিকায় কবিতা, মতামত লিখেছি। ফেসবুকিং করেছি ইচ্ছামতো। তার মানে প্রতিবাদ করেছি। আমারতো আর ক্ষমতা নাই , ভুল ভাল মনের কথা প্রকাশ করি। মোস্তফা ক্যাফেতে কফির আড্ডায় সে দিন এস পি স্ত্রী মিতু হত্যা প্রসঙ্গে এক জন বললেন , খুবতো তনুর জন্য লিখলেন, মিতুর জন্য লিখলেন না কিছু ? আমি চুপ থাকলাম, কি জবাব দেব। মিতু , তনু ই কি শেষ ? নাকি আরো আসবে ? লাশের খবর, লাঞ্চিতার খবর। আর কত লিখব, কি লিখব ? লি লাভ ? সে দিন দেখলাম ,পুলিশ নিজেরাই মানব বন্ধন করছে ! কি বলার আছে?
ফেস বুকে দেশের খ্যাতিমান সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সাহেব দু একদিন পর ই তনুর কথা লিখেন। আর কত বন্ধুরা তনুর কথা লিখে। কি লাভ ? তনু একটি নাম নয় ,তনু সারা বাংলার, সারা পৃথিবীর নির্যাতিতা নারীর নাম। মিতু একটি নাম নয়, মিতুই তনু তনুই মিতু। অনিরাপদ জনপদের কারো কন্যা, কারো স্ত্রী, কারো বোন, কারো মা।
আরেক দিন খুব কাছের একজন বন্ধু যিনি আমার এই সব লেখালেখিকে নিজের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানো মনে করেন। তিনি বললেন, এই সব হবেই এ দেশে, কারন কি জানতে চাইলে, চোখ লাল করে বলেন, বাবু ভাই, বাদ দেন ,
কেন? কেন বাদ দেব? উত্তরে বলেন এই সব লেখেন যে পড়ে কেউ,আরে আমিই তো পড়ি না ,এই সবে কি অপরাধ কমবে ,সে সাথে শুনালেন গণতন্ত্র , নির্বাচন,ফাঁসি, ক্ষমতার অপব্যাবহার, শোষণ নীতি, ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া ,সব ধর্মকে একীভূত করে গুলিয়ে ফেলা। ঘরে বাইরে , নগ্ন বেহায়া পাশ্চ্যাত্য সংস্কৃতির মিশ্রণ, ভারতীয় চ্যানেলের প্রাদুর্ভাব, অসীম, অসম স্বাধীনতা, দারিদ্রতা , বেকারত্ব সব কিছুই নাকি এই সব খুন, জোর জুলুম এর জন্য দায়ী। তাই তিনি অন্ধ হয়ে থাকেন পত্রিকায় পড়েন না টিভি ও দেখেন না। রাজনীতির কথাও শুনতে চান না। উনি জানেন, উনাকে কাজ করতে হবে। কেউ মেরে ফেললে মরতে হবে ,নয়তো একদিন এভাবেই বিদায় নিতে হবে।
বিচারের নামে নাটক বাজি আজ সবাই বোঝে। কিন্তু একাত্তর আর আসবে না ফিরে এই বাংলায়, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে না আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নিদেন পক্ষে হবে না নব্বই এর গণ অভ্যুত্থানের মতো, বলছিলাম সবাইকে একই কাতারে আসার কথা , সবাই অন্যায়ের মোকাবেলা করার জন্য দলীয় দ্বন্ধের ঊর্র্ধে উঠে আসবে না কেউ. সবাই নিজের জীবন নিয়ে নিজের পরিবার নিয়ে শংকিত। প্রতি পদে পদে মরনের ভয়। নিজের পরিবারকে নিয়ে আতঙ্কে আছেন সারা দেশের মধ্যম শ্রেণীর ,নিন্ম শ্রেণীর মানুষ।কাঁদছে তনুর মা বাবা ,কাঁদছে মিতুর সন্তান। মিতুর স্বামী আইনের লোক বিচার পেয়েও যেতে পারে। কিন্তু সন্তান ফিরে পাবে না মা । মা ফিরে পাবে না সন্তান। আজব দেশের গজবে আছি তনুর পিতা মাতা পরিবার পরিজনেরা । আগেই বলেছি তনু একটা নাম নয় শুধু সারা বিশ্বের নির্যাতিত নারীর নাম তনু। বিচারের দাবি নিয়ে ঘুরতে হবে পথে পথে। একের পর আরেক তনুর সংবাদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এই বাংলায়! ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ,শুধু পদ পদবি ক্ষমতা ধন সম্পদের কথাই ভাবি, মানবতার কথা ভাবি না। ভাববো কি করে বিবেকটা যে বন্দী আছে দূর অজানা কোন এক জেল খানায় ,যেখানে আছে নোংরা পঁচা দুর্গন্ধ কুটিলতার জটিল সমীকরণের খেলা। দেশ ,ধর্ম ,ক্ষমতা নিয়ে হাতি ,ঘোড়া ,সিপাহী,মন্ত্রী ,রাজাদের পাশা খেলা চলে, সেই জেলখানার রাজার দরবারে। তনু মিতুদের কথা ভাবার সময় কারো নেই।
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ জুন ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস