সবুজ আলম ফিরোজ: বন্ধু হচ্ছে চাঁদের মতো। চাঁদনী রাতে যেখানেই যাবো, সঙ্গে যাবে চাঁদ। যতদূরেই হোক, দূর আকাশ থেকে জানান দেবে ‘আমি আছি’। সময় পাল্টে যাবে, তবে বন্ধুত্ব থাকবে অটুট। বন্ধু আর বন্ধন শব্দ দুইটা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। পাকাপোক্ত বন্ধনের ভিত্তিই বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব মানেই যেন হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, ভালোবাসা দিয়ে মন খুলে জমানো কথা বলা।
আত্মার কাছাকাছি যে বাস করে, সে আত্মার আত্মীয়, বন্ধু বা স্বজন। বন্ধু শব্দের মাঝে মিশে আছে যেন নির্ভরতা আর বিশ্বাস। তাইতো বন্ধুর জন্য গেয়ে ওঠা- হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার-আমার অন্যদিনের ভোরে।
সুসময়ে বন্ধু বটে হয়, দুঃসময়ে কেউ কারো নয়’- এই একটা বচনকে পরিবর্তন করতে পারলেই প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা সম্ভব। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে বন্ধুত্বের ধরণ পাল্টে গেছে বহুলাংশে। যুগ পাল্টালেও বন্ধুত্বের বন্ধন আদি ও অকৃত্রিম। প্রকৃতির চিরন্তণ নিয়মে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মানুষে-মানুষে, ছেলে-মেয়ে, ছাত্র-শিক্ষক, বাবা-মা, পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে।
জীবনের পথ পরিক্রমায় শৈশব, কৈশর, ছাত্রজীবন, কর্মক্ষেত্রে, সংসার ও সমাজ জীবনে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অনেকের সাথে। প্রকৃত ও যোগ্য বন্ধু নির্বাচন একটি সঠিক সিদ্ধান্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন। বন্ধু নির্বাচনে ভুল করলে জীবনে ছন্দ পতন ঘটে।
বন্ধু সম্পর্কে এরিস্টটল বলেছেন, ''বন্ধু'' হচ্ছে- দুটি দেহের মধ্যে এক আত্মার বাস। এমন কেউ কি আছেন- যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে চান না ? বন্ধুদের সাথে নিয়মিত আড্ডা দিতে পছন্দ করেন না ? সম্ভবত কেউ নেই। থাকার কথাও নয় কারণ এমন কেউ নেই যার বন্ধু নেই।
ইসাবেলা নরটন তার জীবদ্দশায় বলে গেছেন, ''বন্ধুর মধ্যে তুমি খুঁজে পাবে দ্বিতীয় জীবন। অনেক বড় বড় মনীষীরা বন্ধুত্বকে অনেক ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
এই দিনে মানুষ বন্ধুদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। পরস্পরকে ফুল, কার্ড, হাতের ব্যান্ড প্রভৃতি উপহার দেওয়া বন্ধু দিবসের রীতি। বন্ধুত্বের ইতিহাস প্রায় মানব সভ্যতারই সমান বয়সী। যুগ-যুগ ধরে চলে আসা এই অপূর্ব সম্পর্কটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যই মূলত বন্ধু দিবসের জন্ম।
''বন্ধুত্ব দিবসের ইতিহাস :
প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস পালন করা হয়। ১৯১৯ সাল থেকে শুরু হয় এ দিবস। উদ্যোক্তা ছিলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় 'হলমার্ক কার্ডস' এর প্রতিষ্ঠাতা জয়সি হল। তার এ ধারাবাহিকতায় ক্রমেই মানুষ আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার পালন করে আসছিল ফ্রেন্ডশিপ ডে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ১৯৩৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার ঘোষণা করলো ফ্রেন্ডশিপ ডে হিসেবে। তারপর থেকে এটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা বিশ্বে। যা বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশেও সবাই পালন করে। একজন বন্ধু শুভেচ্ছা জানায় অন্য বন্ধুকে।
লেখক: সবুজ আলম ফিরোজ
সাংবাদিক