শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:২৯:৩৭

যে কারণে বাংলাদেশিদের লিবিয়ায় যাওয়া বারণ

যে কারণে বাংলাদেশিদের লিবিয়ায় যাওয়া বারণ

প্রবাস ডেস্ক :  এখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় বসবাস করছেন ৪০ হাজার বাংলাদেশী। অভিভাবকহীন এসব বাংলাদেশী রাজধানী ত্রিপোলি ও বন্দরনগরী বেনগাজিতে অনেকটা ‘প্রাণ’ হাতে নিয়ে নিজেদের আবাসস্থল থেকে দৈনন্দিন কাজে যাওয়া-আসা করছেন। পথে রয়েছে দখল-পাল্টা দখল নিয়ে গোলাগুলি, হামলা ও সশস্ত্র ডাকাতদের আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয়। এরপরও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে অর্থের টানে কাজ করে চলেছেন এসব শ্রমিক।  

তবে বৈধপথে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তা করতে পারছে না উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশী শ্রমিকরা। কারণ গত এক বছর ধরে টাকা পাঠানোর জন্য সব এজেন্সি বন্ধ। এসব প্রতিকূলতার কারণে অনেক বাংলাদেশী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা ও ট্রলারে করে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্য ‘ইউরোপে’ যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে কপালের জোরে ইউরোপে পৌঁছাতে পারছেন। আবার কেউবা অতল সাগরে হারিয়ে যাচ্ছেন।

এত ঝুঁকির মধ্যে চলাফেরা করলেও তাদের অভিভাবক হিসেবে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে আপাতত কোন দূতাবাস নেই। বেনগাজিতে যারা থাকছেন তাদের বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে কেউ দেখতে আসেন না। চলতি বছরের মে মাসে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস গুটিয়ে তিউনেশিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। এখন তিউনিশিয়া থেকেই লিবিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেখভালের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিউনেশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কূটনীতিক জানান, লিবিয়ায় বর্তমানে কার্যত কোন সরকার নেই। এ কারণে বাংলাদেশী দূতাবাস শ্রমিকদের কোন সহায়তা দিতে পারবে না। তারা লিবিয়ায় অসহায়, কারণ লিবিয়ায় বর্তমানে দূতাবাস নেই। তিউনিশিয়া থেকে দূতাবাস স্থানান্তর করলে তখন সহায়তা করতে পারবে। এখন ক্ষুদ্র পরিসরে লিবিয়াতে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার লিবিয়ায় কাজ নিয়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) এএসএম আশরাফুল ইসলাম জানান, লিবিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অনেক সচেতন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী  শ্রমিকদের দলগত হয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছি। তবে সূর্যাস্তের আগেই তাদের চলাচল করতে হবে। তিনি জানান, বিশ্বের নামকরা কোম্পানিগুলো তাদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিচ্ছে লিবিয়াতে। ২০১১ সালে মিশর, চাঁদ ও ঘানার শ্রমিকদের নিজ দেশে ফেরত নিয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশী শ্রমিকরা লিবিয়াতে ভাল অবস্থায় আছে।

প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম আমাদের শ্রমিকরা। কিন্তু সমস্যা হলো বৈধ পথে পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোর সকল রাস্তা বন্ধ। এজন্য অনেকে দেশে ফেরত যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি উচ্ছেদ হওয়ার পরে পুরো লিবিয়া অশান্ত হয়ে পড়ে। দেশটিতে সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে। লিবিয়ান নাগরিকরা গাদ্দাফির পতনের পর কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষ ও হামলায় জড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশীদেরও দেশটিতে বসবাস করার জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসও শ্রমিক সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। যদিও ২০১১ সালে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৩৭ হাজার অভিবাসী শ্রমিক ফেরত এসেছে। এখনও বাংলাদেশী ৪০ হাজার শ্রমিক লিবিয়াতে কর্মরত আছেন। তারা অস্বস্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এদিকে গত ২৪শে আগস্ট ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূ-মধ্য সাগর  থেকে ৫০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৭৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক। ২৪ জনকে মৃত ও  ৫৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

লিবিয়ার বেনগাজিতে ৪৫ বছর ধরে বসবাসকারী বাংলাদেশী গোলাম কিবরিয়া মানবজমিনকে জানান, ফিলিপাইন, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের দূতাবাস তাদের নাগরিকদের দেখভাল করছে। আমাদের দেশের দূতাবাসের আচরণ দেখে সত্যিই কষ্ট পাই। বেনগাজিতে তারা আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। ত্রিপোলি ও তিউনেশিয়ায় আলাদাভাবে বাড়িভাড়া করে থাকছেন তারা। আমাদের মতো গরিব দেশের এত অর্থের অপচয়ের মানে কি?

লিবিয়াতে বসবাসরত অন্য বাংলাদেশীদের সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়ায় বর্তমানে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। বাংলাদেশীসহ সব শ্রেণীর মানুষের রাস্তায় বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ যে কোন সময় তাদের ডাকাতের হামলার শিকার হতে হচ্ছে। অনেকে দেশে আসার জন্য টাকা জমিয়ে রাখছেন। কিন্তু ডাকাতরা ওই টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করার মতো কোন কর্তৃপক্ষ নেই। পাশাপাশি নেই টাকা পাঠানোর বৈধ কোন ব্যবস্থা। অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালেও রেট পাচ্ছেন খুব কম।

এক দিনারের মূল্য মান ৬৩-৬৫ টাকা হলেও এর বিপরীতে ৩৫-৪০ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে গত মে মাসে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধের কথা জানায় লিবিয়া। দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সরকার এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য লিবিয়া গিয়ে সেখান থেকে অবৈধভাবে নৌপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে দেশটি’র এক অঞ্চলের সরকারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

লিবিয়ায় না যাওয়ার পরামর্শ: লিবিয়ায় চলমান সংঘাত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশী নাগরিকদের সে দেশে না যেতে আবারও সতর্ক করে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় লিবিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সে দেশে না যেতে অনুরোধ করছে। লিবিয়াপ্রবাসী যারা বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন, তাদেরও আপাতত সে দেশে না ফেরার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।  -মানবজমিন

৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে