প্রবাস ডেস্ক: ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছে। প্রথম ৯৬ ভাগ্যবান বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে আবারও উন্মুক্ত হলো দেশটির শ্রমবাজার। দেশটিতে যাওয়া এই শ্রমিকদের ইতোমধ্যে তাদের নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় কাজ শুরু করার আগে দেশের সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিজি-০৮৬ ফ্লাইটটি শনিবার ভোররাতে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছে। এ ফ্লাইটটিতে করে ৯৬ শ্রমিকের সঙ্গে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারাও দেশটিতে গেছেন। মালয়েশিয়ায় কেএলআই এয়ারপোর্টে এ কর্মীদেরকে নিয়ে বিমানটি অবতরণ করে।
ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর এই কর্মীদের রিফ্লেকস কেয়ার এম এসডি এন বিএইচডির (নিয়োগকর্তা ) ডিরেক্টর দাতু রাধা কৃষ্ণান ও জি এস এম ফাইজাল ওসমান গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম ও দূতাবাসের শ্রম শাখার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার কাজী সালাহ উদ্দিন, মালয়েশিয়াস্থ অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের মহা-ব্যাবস্থাপক মো. ওয়ালিউল্লাাহ, শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল, পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মশিউর রহমান তালুকদার, শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদ, কল্যাণ সহকারী মোকসেদ আলী ও অন্য কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সেদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় কর্মীদের অগ্রণী ব্যাংকের লগোখচিত একটি করে টি-শার্ট ও বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের পক্ষে একটি করে সিম প্রদান করেন রাষ্ট্রদূত।
মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা ও দিন।
শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করবেন না, যাতে করে বাকিদের আসার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। কোনো ধরনের সমস্যা হলে দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করার জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ফোরামে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শ্রম রফতানি শুরু হয়েছে। তবে যারা আসবেন তারা আমাদের দেশের নাগরিক হিসেবে তাদেরকে দেখভাল করার দয়িত্বতো আছেই হাইকমিশনের।
এক প্রশ্নের উত্তরে হাইকমিশনার বলেন, দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে যাতে করে হয়রানি না হতে হয় সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। আর আমাদের দেশের সাধারণ শ্রমিকরা এসে দুই পয়সা ইনকাম করে দেশে পাঠাতে পারেন সে ব্যবস্থাই করেছে বাংলাদেশ সরকার।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে কলিং ভিসা চালুর পর ২০০৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকারি হিসেব মতে সোয়া ৮ লাখ কর্মী যাওয়ার পর মালয়েশিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয়। তবে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে শ্রমিকদের প্রথম গ্রুপটি মালয়েশিয়ায় পৌঁছলো।
‘জিটুজি প্লাসের’ মাধ্যমে মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে যাওয়া শ্রমিক মশিউর রহমান, মো. জোবাইরুল হক, মো. জাহিদ হাসান ও মো. সিরাজ মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আসতে পারব কখনও ভাবতে পারিনি। সত্যিই বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। আমরা সবার দোয়া প্রার্থী।’
বাংলাদেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরের জন্য দুই দেশের সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুশীল সমাজ। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সফলতাকে ইতিবাচক মনে করছেন অনেকে। তবে দেশটিতে বসবাসরত অবৈধদের সমস্যা সমাধান করা বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
১১ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস