তসলিমা নাসরিন : আমরা মাংসাশী। বাঙালিদের মধ্যে শাকাহারি কমই আছে। মাছ মাংস ডিম দুধ খেয়ে আমাদের অভ্যেস। ঈদের দিন ছাড়াও আমাদের জন্য প্রতিদিনই গরু ছাগল মারা হচ্ছে। শুধু আমাদের জন্য কেন, পৃথিবীর সব মাংসাশী প্রাণীর জন্যই মারা হচ্ছে।
খাদ্য হিসেবে যে গরু ছাগলকে বড় করা হয়, শুধু সেগুলোকেই। সভ্য দেশগুলোয় পশুদের আগে অবশ করে নিয়ে পরে মারা হয়, এতে মৃত্যুটা যন্ত্রণাময় হয় না। কোরবানির ঈদেও গরু ছাগল ভেড়াকে মারা হচ্ছে, কিন্তু মারা হচ্ছে কষ্ট দিয়ে।
ছোটবেলায় দেখতাম বাঁশ দিয়ে পাগুলোকে মুচড়ে মুচড়ে গরুকে ধরাশায়ী করা হয়, তারপর জ্যন্ত প্রাণীটির গলা ধারালো ছুরি দিয়ে কাটা হয় একটু একটু করে। মানুষ ভিড় করে দ্যাখে এই হত্যাকান্ড। গরু ছাগল চিৎকার করে কাঁদে। মানুষ হাসে। কেউ ওদের কান্নার দিকে ফিরে তাকায় না।
জবাই করার আগে পশুদের যেন অবশ করে নেওয়া হয়। পশুরা যেন যন্ত্রণা ভোগ না করে। প্রচুর লোককে দেখিয়ে দেখিয়ে জবাই করা উচিত নয়। গরু-জবাই দেখতে দেখতে মানুষ ক্রমশ নৃশংস হয়ে উঠছে। মানুষকে জবাই করার জন্য এখন ছুরি হাতে নিচ্ছে। গরু জবাইগুলো আড়ালে কর। হত্যাকান্ড কোনও উৎসব নয়। হত্যাকান্ড কাউকে যেন আনন্দ না দেয়।
অনেকে বলে স্টান করে বা অবশ করে নিলে পশু জবাই নাকি হালাল হয় না। বর্বরতা নৃশংসতা যদি হালাল হয়, আমি হালালের পক্ষ নেবো না। পশুর প্রতি দরদ থাকা যদি হারাম, তবে আমি হারাম কাজ করতে চাই, আমি হারাম মাংস খেতে চাই। -লেখিকার ফেসবুক থেকে।
এমটিনিউজ/এসএস