প্রবাস ডেস্ক : সাবিনা সাঈদের বয়স ৩৬। সপ্তাহে তিনদিন তাকে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিডনি ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে তার শরীরের রক্ত পরিশোধন করা হয় এবং এর মাধ্যমে সে বেঁচে আছে। কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকাটা সাবিনার কাম্য নয়।
তার চলাফেরা সীমিত, সে কাজ করতে পারে না, দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারে না এমনকি খাওয়া-দাওয়াও খুব সীমিত। সবসময় ক্লান্ত অনুভব করেন তিনি। সাবিনা বলেন, "আমি এগুলো নিয়ে ভাবতে চাই না। আমি বেঁচে আছি ঠিকই, কিন্তু জীবন আমার কাছে উপভোগ্য নয়। আমার মনে হয় কেউ যদি আমার জীবন ফিরিয়ে দিত।"
সাবিনার দুটো কিডনি অকেজো। একটি নতুন কিডনি পাবার আশায় তিনি এখন অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এজন্য তাকে হয়তো পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্রিটেনে এখন কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে। সেজন্য এখন ডায়ালাইসিসের উপর বেঁচে আছেন সাবিনা।
সাবিনা যখন ছোট ছিলেন তখন তার কিডনি অকেজো হয়ে যায়। বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর মায়ের একটি কিডনি সাবিনার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন সেটিও অকেজো হয়ে গেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে এখন তার রক্তের গ্রুপ মিলছে না। ফলে তাদের কেউ সাবিনাকে কিডনি দান করতে পারবে না।
সাবিনা বলছিলেন, "আমি জীবনটা উপভোগ করতে চাই। আমি একজন জীবন সঙ্গী খুঁজে পেতে চাই।" ব্রিটেনে যারা কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়ানরা ৩০ শতাংশ। কিন্তু এশিয়ান এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে কিডনি দানকারী মাত্র ছয় শতাংশ।
গবেষকরা বলছেন, অনেকে মনে করেন তারা কিডনি দান করলে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন থাকবে। তাছাড়া অনেকে মনে করেন, বয়স বেশি হয়ে গেলে কিডনি দান করা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোন বয়সে কিডনি দান করা যায় এবং একজন সুস্থ মানুষ একটি কিডনি নিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে।
সাবিনা অনেক কিছুই খেতে পারে না। যেমন - আলু, লবণ, চকলেট এবং ফলমূল। প্রতিদিন আধা লিটারের বেশি তরল খাবার তিনি খেতে পারে না। ফলে গ্রীষ্মকালে সবসময় তৃষ্ণার্ত থাকেন সাবিনা। ২০১৬-১৭ সালে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণের তালিকায় থাকা অবস্থায় ৪৭০জন রোগী মারা গেছেন।
এ পরিস্থিতি কি সাবিনাকে উদ্বিগ্ন করে? তিনি বলেন, "আমি সবসময় ইতিবাচক থাকতে চাই। নতুবা আমি পাগল হয়ে যাব। মাঝে মধ্যে আমি আমার মায়ের সামনে কাঁদি।" -বিবিসি
এমটিনিউজ/এসএস