প্রবাস ডেস্ক : প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে সৌদি আরবে। পাশাপাশি সৌদি আরবে ভালো অবস্থানেও রয়েছে বাংলাদেশিরা। কিন্তু খুব শিগগিরই মহাবিপদে পড়তে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সম্প্রতি সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে যে, বিদেশিরা ১২ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর দেশটিতে করতে পারবেন না। আগামী সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ নতুন হিজরি সনের ১ মহরম থেকে এই আইন কঠোরভারে বাস্তবায়ন করবে সৌদি সরকার।
আর এতে করে সেদেশে থাকা প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে তাদের মূলধন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে দেশে ফিরে আসতে হবে এবং এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি তাদের চাকরি হারাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ ফোন কলের মাধ্যমে একটি গণমাধ্যমকে জানান, সৌদি আরবে এসে বিদেশিদের কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেয়ার নিয়ম নেই। সৌদি আরবের নাগরিকদের নামেই শুধুমাত্র ব্যবসার লাইসেন্স দেয় দেশটির সরকার।
তিনি আরো বলেন, কাজেই কেউ শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরব গিয়ে ব্যবসা শুরু করলে তা বেআইনি। সম্প্রতি সৌদি সরকার ১২ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে বিদেশিদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলেই মনে হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এমনটিই জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ শ্রমিক প্রেরণকারী দেশগুলো থেকে প্রথমে সৌদি আরবে যান শ্রমিক হিসেবে। পরে তারা কোনো এক সৌদি নাগরিকের (কফিল) নামে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এতে লাভের পরিমানও বেশি। এক্ষেত্রে লাভের একটি অংশ ওই (সৌদি নাগরিক) কফিলকে দিয়ে দিতে হয়। এইভাবে সৌদি আইনি সুযোগ নিয়ে প্রায় ৪ দশক ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদেশিরা। এদের মধ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও রয়েছে।
সৌদি সরকার কর্তৃক ঘোষণা কৃত যে ১২ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন না বিদেশিরা তা হলো- ঘড়ি, চশমা, চিকিৎসা যন্ত্রাংশ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ভবন নির্মাণ সামগ্রী, কার্পেট, গাড়ি ও মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, তৈরি পোশাক ও প্রসাধনসামগ্রী, পেস্ট্রি ও গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিসপত্র।
সূত্র মতে, সৌদি আরবে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। আর বাংলাদেশিরা এই ১২ ধরনের ব্যবসার সঙ্গেই অধিকাংশ জড়িত। সৌদি সরকারের এই ঘোষণায় বাংলাদেশিদের মধ্যেও নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১২ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে বিদেশিদের ওপর সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক কর্ম হারাবেন। কারণ, সৌদি আইনে বিদেশ থেকে শ্রমিক আনতে অর্থ না নেয়ার কথা থাকলেও সৌদি নাগরিকরা তা মানছেন না।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, একটি ভিসা পেতে এক থেকে দুই লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এজেন্সিও মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। ফলে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে যাচ্ছে সৌদি আরব যেতে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত। সৌদি আরবে কারো বিরুদ্ধে ভিসা কেনা-বেচার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু অপরাধটির দিকে নজরদারি নেই।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া অর্থের বাইরে কয়েক গুণ বেশি টাকা নিয়ে সৌদিতে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছি। অনেক ক্ষেত্রে তাদের জামানতের টাকাও কেটে রাখা হয়।
ভিসা কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশেষ করে সৌদিতে গৃহকর্মী ভিসার ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও নাকি ভিসা কিনে থাকে। সৌদি আইন অনুযায়ী সৌদির কোনো ব্যক্তি এটা করতে পারে না। উল্টো সৌদি মালিককে শ্রমিক নিতে হলে বিমানভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেই নেয়ার কথা। কিন্তু উল্টো তাদের টাকা দিয়ে ভিসা কেনা হচ্ছে। যার ফলে অভিবাসন ব্যয় অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে আমাদের দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
এদিকে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার অভিবাসন ব্যয়ের হার বেঁধে দিলেও এজেন্সিগুলো তা মানছে না। সরকারের নির্ধারিত এ ব্যয় হচ্ছে সৌদি আরবে ১ লাখ ৬৫ হাজার, মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ লাখ ৭ হাজার, কুয়েতে ১ লাখ ৬ হাজার, ওমানে ১ লাখ, ইরাকে ১ লাখ ২৯ হাজার, কাতারে ১ লাখ, জর্ডানে ১ লাখ ২ হাজার, মালদ্বীপে ১ লাখ ১৫ হাজার ও ব্রুনাইতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বেশি অর্থ নেয়া ঠেকাতে সার্ভিস চার্জসহ সব অর্থ ব্যাংকের (চেক, ড্রাফট, পে অর্ডার) মাধ্যমে লেনদেন করার কথা থাকলেও হাতে হাতে টাকা নিয়ে থাকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। দেয়া হয় না রসিদও। সূত্র: মানকণ্ঠ।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস