প্রবাস ডেস্ক: পাখির বৃষ্টা থেকেও বাংলাদেশের মাটিতে গাছের জন্ম হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মাটি আমাদের বাংলাদেশের মতো এতো উর্বর নয়। বরং একেবারে উর্বর নয়। সেখানে কোন ফসল হয় না। শুধু মাঝে মাঝে খেজুর গাছ দেখা যায়।
এমন এক কঠিন অবস্থার মধ্যে বসবাসকারী মানুষদের সুখবর দিয়েছেন এক বাংলাদেশি। বাংলাদেশি এক কৃষক সৌদি আরবে অনেক আগেই সবজী চাষ শুরু করেছেন। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক চট্টগ্রাম জেলার রা্ঙ্গুনিয়া উপজেলার অধিবাসী মোহাম্মদ নুর হোসেনশুরু করেছেন মাছ চাষ। মরুর বুকে তার মৎস খামার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
রাজধানী আবুধাবী থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে লিওয়ার মাজিরা নামক স্থানে মরুভূমিতে কৃত্রিম পুকুর বানিয়ে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করেছেন মাছের চাষ।
তার এমন মাছের খামার দেখতে প্রতিদিন স্থানীয় আরবী আর প্রবাসী বাংলাদেশিসহ নানা দেশের অনেক মানুষ ভিড় করছেন। তার এই খামারে কাজ করে বেশ খুশি দেশিয় শ্রমিকেরা।
এত কিছুর মাঝেও খুশি নেই নুর হোসেন নিজেও। কেননা তার খামারের উপার্জিত আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের বাহিরে। তার খামারের জন্য দেশ থেকে মাছের পোনা সহজ ভাবে আনতে না পারায় এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের নানা দেশ থেকে উচ্চ মুল্যে মাছের পোনা এনে মাছের চাষ করায় লাভের মূখ কম দেখছেন এ খামারি। বাংলাদেশ থেকে সহজ ভাবে মাছের পোনা আনতে না পারায় তার খামারে অর্জিত রেমিটেন্স চলে যাচ্ছে অন্যদেশে।
একদিকে মরুভূমির বালির গরম অন্যদিকে অধিক তাপমাত্রার মাঝে যেখানে মরু অঞ্চলের প্রাণি বেঁচে থাকতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে মাছের চাষ তো একেবারেই অকল্পনীয়। আরব সাগরের নুনা পানির সয়লাবে মিষ্টি পানি পাওয়া দূলর্ভ। তবুও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মাজারী ২টি পুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
পরবর্তীতে মাজারি আকারের ৭-৮টি পুকুর বানিয়ে নুর হোসেন শুরু করেছিলেন নানা প্রজাতির মাছের চাষ। এ মৎস খামারটির বয়স এখন প্রায় ৩ বছর। বর্তমানে তিনি চারটি বড় আকারের পাকা পুকুর করে ও প্রায় ৫০ টি মাজারি আকারের ফাইবার ট্যাংকে মাছের সফল চাষ করছেন তিনি। এখন মোহাম্মদ নুর হোসেনসহ এ মৎস্য খামারে ২০ জন বাংলাদেশি কাজ করেন।
মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পুকুরের পানিতে প্রযোজনীয় অক্সিজেন বৃদ্ধি করতে পুকুরগুলো পাম্পের ঝর্ণাও বসানো হয়েছে। মরুভূমির মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম বিধায় পুকুরের তলদেশসহ চারপাশে মোটা প্লাস্টিক বিছিয়ে পানি ধারণ করে রাখা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে একটা পুকুরের তলদেশসহ চারপাশে পাকাও করা হয়েছে। এতে দেশিয় নানা প্রজাতির মাছসহ স্থানীয় হামুর মাছ্ও আছে। এ পাকা পুকুরে মাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকলে ক্রমান্বয়ে বাকি পুকুরগুলো পাকা করা হবে বলে জানান তিনি।
আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশ, শহর ও অঞ্চল থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন মরুর বুকে এমন মাছের চাষ দেখতে স্থানীয় আরবীয়সহ অনেক পর্যটকও ভিড় করেন এ মৎস খামার দেখতে। আবার বাংলাদেশি প্রবাসীসহ অনেকে আসেন মিঠা পানির তাজা মাছ কিনতে। এখানে আছে তেলা পিয়া, কই, শিং, মাগুর, রুই, কাতাল, কার্ফু, মৃগেলসহ কার্ফ জাতীয় দেশিয় মাছ।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে দেশিয় তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও দেশ থেকে নানা প্রজাতির দেশিয় মাছের পোনা নিয়ে আসতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেন এই খামারের উদ্বোক্তা মোহাম্মদ নুর হোসেন।
তিনি জানান, স্থানীয় এরাবিয়ানসহ প্রবাসীরা চড়া দামে কেনেন এসব মাছ। প্রতি কেজি ৪০-৫০ দিরহাম যা বাংলাদেশি টাকায় ৮০০-১০০০ টাকা। দেশ থেকে প্রচুর পরিমানে মাছের পোনাসহ মাছ চাষের যাবতীয় উপকরণ সহজ উপায়ে আনতে পারলে আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন বাণিজ্যে ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা যাবে।
মাছের পোনা আনার সময় তিনি চটগ্রামও ঢাকা বিমান বন্দরের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে অনেক কষ্টের বিনিময়ে তিনি সামান্য দেশিয় প্রজাতির মাছের পোনা দিয়ে এ খামারের যাত্রা শুরু করেন। ইতিমধ্যেই তিনি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/জেএম/আরএম