প্রবাস ডেস্ক : অনেক স্বপ্ন নিয়েই মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার নতুন বাজার বরুড়া গ্রামের যুবক। পারিবারিক অভাব অনটনে পড়াশোনায় বেশিদূর পর্যন্ত এগোতে পারেননি।
২০০৭ সালে বাবা মফিজ উদ্দিনের অভাবের সংসারে খানিকটা স্বচ্ছলতা আনার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা করেন মালয়েশিয়ায়।
দেশে থাকতে মালয়েশিয়াকে স্বপ্নের দেশ মনে করতেন খায়রুল। কিন্তু বিদেশের মাটিতে নেমে দেখলেন স্বপ্ন আসলে স্বপ্নই। মালয়েশিয়ায় আশার পর নামমাত্র বেতনে কাজ করতেন গ্যান্তিংয়ের একটি কোম্পানিতে।
তার সীমিত আয়ে পরিবারের জন্য টাকা পাঠানো তো দূরের কথা নিজের চলাই কষ্টকর হয়ে যেত। কিন্তু একপর্যায়ে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে যান তিনি।
এভাবেই কেটে যায় প্রবাস জীবনের ১০ বছর। চার বোন ও তিন ভাইয়ের একজন তিনি। আর্থিক অস্বচ্ছলতা, ভিসা না থাকা, পরিবারের জন্য টাকা পয়সা না পাঠাতে পারা এসব নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন খায়রুল।
এরই একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। বিষয়টি মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করেন তারই এক সহকর্মী।
দূতাবাস খায়রুলকে দেশে পাঠাতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। কিন্তু দূতাবাসের সামনে এলে খায়রুল আবোল তাবোল বলতে থাকেন, আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। তার চেয়ে আমার নিজে মরে যাওয়া ভালো। আমি আত্মহত্যা করব। দুই তিন বার খায়রুল আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন।
বিষয়গুলো দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কল্যাণ সহকারী মোকছেদ আলীর নজরে এলে তিনি দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি মুশাররাত জেবিনকে জানান। খায়রুলের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন তিনি, খায়রুল মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। এরপর খায়রুলকে একদিন তার হেফাজতে রেখে ডাক্তারের কাছে পাঠান।
খায়রুল একটু সুস্থ হলে পরদিন দূতাবাসে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল পাস ও টিকিটের ব্যবস্থা করেন। ১ জুন বুধবার বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০৮৭ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তিনি।
তার সঙ্গে আসেন বাংলাদেশ দূতাবাসের ডিফেন্স উইং সার্জেন্ট মাহফুজ খায়রুল। তুলে দিলেন বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু ততদিনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। হায় রে স্বপ্ন! স্বপ্নের দেশ থেকে বাবা-মায়ের আদরের সন্তান ফিরলো পাগল হয়ে।
১জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম