শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬, ১২:৫৯:২২

বাংলাদেশি শ্রমিকরা বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাতে পারছেন না

বাংলাদেশি শ্রমিকরা বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাতে পারছেন না

নিউজ ডেস্ক: সরকারিভাবে লিবিয়া যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও ভিন্নপথে লিবিয়া গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিপদে পড়ছেন। কয়েকটি দূতাবাস থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়ে ভিন্ন উপায়ে লিবিয়া যাত্রা ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত ২রা জুন চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে লিবিয়া যাত্রার কয়েকটি বিকল্প রুটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস্যুলার) মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, লিবিয়া গমনে নিষেধাজ্ঞার পরও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বা অন্য কোনো বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রথমে শারজাহ, দুবাই ও সুদান যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

লিবিয়া গমনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অনেকে এক শ্রেণির অবৈধ দালালচক্রের সহায়তায় এমনটা করছেন। এ ধরনের অবৈধ ভ্রমণ জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করা প্রয়োজন। এ কারণে বাংলাদেশের চট্টগ্রামসহ সব বিমানবন্দরে অবৈধ পন্থায় লিবিয়া গমনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখাকে নির্দেশনা দিতে যাচ্ছেন তারা। এর আগে গত বছরের জুলাইতে লিবিয়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ১৪ই জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে দেশটির রাজধানী ত্রিপোলীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে কাউকে  লিবিয়া সফরে না যাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া ছাড়াও দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের যুদ্ধ এলাকা, লোকজনের ভিড়, বিক্ষোভ বা মিছিল এড়িয়ে চলে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সরকারের এ ঘোষণার পরও ওই দেশে বসবাসকারী প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

লিবিয়া থেকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দেশটিতে অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি। ঝুঁকি নিয়ে বেনগাজি ও ত্রিপোলীতে বসবাসরতদের খোঁজ নিচ্ছে না বাংলাদেশ দূতাবাসের কেউই। বরং অ্যাম্বাসি উড়িয়ে দেয়ার হুমকির ধুয়ো তুলে ত্রিপোলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ তিউনেশিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা বলছেন, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ আমাদের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ তাদের দূতাবাসের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ত্রিপোলী ও বেনগাজীতে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাদের দেশের নাগরিকদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কিন্তু ভিন্ন চিত্র আমাদের দেশের অ্যাম্বাসির কর্তাদের ক্ষেত্রে। পর্যটন দেশ তিউনেশিয়ায় বসে তারা খোঁজ খবর পাঠাচ্ছেন।

লিবিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ত্রিপোলী ও বন্দরনগরী বেনগাজিতে ঝুঁকির মধ্যে আবাসস্থল থেকে কাজে যাওয়া আসা করছেন। তাদের মনে নানা ভয়ভীতি থাকলেও অর্থের টানে কাজ করে চলেছেন এসব শ্রমিক। তবে লিবিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি শ্রমিকরা বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাতে পারছেন না। কারণ গত এক বছর ধরে টাকা পাঠানোর জন্য সবগুলো এজেন্সি বন্ধ। এ বিষয়টি সুরাহা করতে কয়েকটি দেশ  চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ দূতাবাসের এদিকে কোনো নজর নেই। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি উচ্ছেদ হওয়ার পরে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৩৭ হাজার অভিবাসী শ্রমিক ফেরত এসেছে। এখনও বাংলাদেশি ৪০ হাজার শ্রমিক লিবিয়াতে কর্মরত আছেন। তারা অস্বস্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।  জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ১৪ হাজার ৯৭৫ জন, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ১৭৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৪৬১ জন কর্মী যান দেশটিতে। আর এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র শতাধিক কর্মী গেছেন। আর বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে ৪০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশই আছেন রাজধানী ত্রিপোলী ও  বেনগাজীতে।-এমজমিন

১০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে