নিউজ ডেস্ক: প্রায় চার দশক আগে বাংলাদেশের মায়া ত্যাগ করে আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন মোহাম্মদ নূর আহমেদ। কাজ শুরু করেছিলেন গৃহ পরিচারক হিসেবে। পরে একটি সরকারি চাকরিতেও যোগ দেন তিনি। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ৩৭ বছর। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আরব আমিরাতে পৌঁছানো নূর আহমেদের বয়স এখন ৫২ বছর। গায়ের জোর হারিয়েছেন। হারিয়েছেন চাকরিও। সঙ্গে যোগ হয়েছে স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতা। সব মিলিয়ে এক কঠিন সময় পার করছেন এখন নূর আহমেদ। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় আরব আমিরাতে কাটানোর পর আর বাংলাদেশে ফিরতে চান না তিনি, থাকতে চান সেখানেই। গালফ নিউজের এক খবরে উঠে এসেছে নূর আহমেদের বর্তমান এই করুণ চিত্র। এতে বলা হয়, নূর আহমেদ যখন বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাত আসেন তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। তখন কাজকর্ম তেমন কিছুই জানতেন না। ধীরে ধীরে কাজ শিখতে থাকেন তিনি।
নূর আহমেদ বলেন, ‘আমি এখানে অনেক কিছু শিখেছি। এখানে প্রচুর ভালোবাসা ও আতিথেয়তা পেয়েছি। যেমন- প্রথম যে ব্যক্তি স্পন্সর হিসেবে আমাকে এখানে এনেছিলেন তিনি আমাকে অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নেয়া শিখিয়েছিলেন। ওই কাজের ওপর ভিত্তি করেই আমি একটি সরকারি চাকরি পাই এবং সেটা করতে থাকি। আর আরব আমিরাতের মানুষজনের কোনো তুলনা নেই।’ প্রায় পাঁচ বছর আগে সরকারি চাকরিটি হারান নূর আহমেদ। এরপর কিছুদিন একটি মুদি দোকান চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে সেটা বেশিদিন চালাতে পারেননি তিনি। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আক্ষরিক অর্থেই তার কোনো আয়ের উৎস নেই। ফলে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন তিনি। পরিস্থিতি আরো সংকটময় হয়ে ওঠে যখন নূর আহমেদের স্ত্রীর কিডনির রোগ ধরা পড়ে।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। সপ্তাহে তিনবার তার ডায়ালাইসিস করতে হয়। আমাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত ডাক্তার জানান, সপ্তাহে অন্তত দুইবার ডায়ালাইসিস করতেই হবে।’ নূর আহমেদ ও তার পরিবার যেন আরব আমিরাতে অবস্থান করতে পারেন তার জন্য তাদের স্পন্সর করছেন তারই এক সাবেক সহকর্মী। এখন বলতে গেলে কোনোমতে একদিন একদিন করে দিন পার করছেন নূর আহমেদ। আরব আমিরাতে নূর আহমেদের বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি ও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের অর্থ সাহায্যেই দিন পার করছেন তিনি ও তার পরিবার। নূর আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবার ডায়ালাইসিসে ১,৩০০ দিরহাম খরচ হয়। এটাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। এখানে এসব খরচ মেটানোর জন্য সবার যে উদার আচরণ পেয়েছি তা আমি কখনও দেখিনি। বিশেষ করে এটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশে ফিরে আসাও সম্ভব নয় বলে জানান নূর।
তিনি বলেন, ‘স্ত্রীকে নিয়ে এখন আর বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব না। ডাক্তাররাই সেটা বলেছেন। তাছাড়া বাংলাদেশে আমাদের বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানে আমাদের বাড়ি থেকে ডায়ালাইসিস করা যায় এমন নিকটস্থ হাসপাতালে যেতেও দুই ঘণ্টা সময় লাগে। প্রতিবার ডায়ালাইসিসের সময় এই দুই ঘণ্টার রাস্তা তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতির কারণই হবে।’ নূর আহমেদের দুই ছেলে এখন বড় হয়েছে। কিন্তু ভিসাজনিত জটিলতার কারণে তারাও কোনো কাজ পেতে সক্ষম নয়। তারপরও নূর আহমেদ পরিবার নিয়ে থেকে যেতে চান আরব আমিরাতেই। তিনি বলেন, ‘আগে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকেই কাজের প্রস্তাব পেতাম। কিন্তু আরব আমিরাত ছাড়বো না ভেবেই সেগুলো গ্রহণ করিনি কখনও। এখন এখানে থেকেই নিজের পরিবার নিয়ে চলতে পারলে সেটাই হবে আমার কাছে স্বপ্নপূরণের সমান।-এমজমিন
১৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ