প্রবাস ডেস্ক : সর্বদায় ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। কথা বলেছেন মানবাধিকার নিয়ে, চেয়েছেন সকল মানুষের সমান অধিকার। হতে হয়েছে নির্বাসিত এক দেশে থেকে অন্য দেশে। তবে এই লেখিকার তোপের মুখে ভারতের হিন্দু মৌলবাদীরা। তাদের সম্প্রতি কয়েকটি কর্মকান্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে। নিন্মে তসলিমার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।
“কিছুদিন আগে দুই মুসলমান গবাদি পশু ব্যবসায়ীকে হরিয়ানা রাজ্যের গরু রক্ষা দল পিটিয়েছে, জোর করে গোবর খাইয়েছে। এর আগে উত্তরপ্রদেশে গরুর মাংস খেয়েছে বলে এক মুসলমানকে মেরেই ফেলেছে। হিমাচলেও মেরেছে। কিছুদিন আগে, সম্ভবত বিহারে, গ্রামের এক হাটে দুই যুবক মোষ নিয়েছিল বিক্রি করতে, দু'জনকেই খুন করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
এসবের বিরুদ্ধে যতবারই প্রতিবাদ করেছি, ভারতের হিন্দু মৌলবাদিরা ততবারই বলেছে, 'বেরিয়ে যা এদেশ থেকে'। তার মানে আমি যদি গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে নিরীহ দরিদ্র মানুষকে নির্যাতন করা আর খুন করার পক্ষে না থাকি, আমাকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হবে। এতকালের গণতন্ত্রের চর্চা বাক- স্বাধীনতা সম্পর্কে এই শিখিয়েছে এদের!
ইসলামি আতঙ্কবাদিরা সারা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করছে। তারপরও কি মানুষ সতর্ক হচ্ছে? আতঙ্কবাদি হওয়ার সব উৎস নির্মূল করছে? উল্টে প্রভাবিত হচ্ছে। অন্যান্য ধর্ম গোষ্ঠীর মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছে। ইসলামি মৌলবাদিরা যেহেতু হিন্দু মৌলবাদিদের চেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেছে, তাই হিন্দু মৌলবাদিরা মনে করে না দুই মৌলবাদির মধ্যে কোনো তুলনা চলা উচিত। কেউ কেউ অবশ্য বলে, সুযোগ পেলে এরাও জবাই করতো। সুযোগটা হিন্দু মৌলবাদিদের কম। কিন্তু এভাবে গোমাংসের কারণে মানুষ হত্যা করতে করতে এরা হাত পাকাবে, এক সময় অসংখ্য মানুষকে হত্যা করবে, সুযোগ নিজেরাই করে নেবে।
ইসলামি মৌলবাদ-আতঙ্কবাদ যেমন নির্মূল হওয়া উচিত, হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিস্টান ইহুদি মৌলবাদ-আতঙ্কবাদ তেমনই নির্মূল হওয়া উচিত। কোনোটার ধার কম, সেটা টিকে থাকুক, ধার যেটার বেশি সেটা মরে যাক -- এই যুক্তি আমি মানি না। যেটা মন্দ, সেটা মন্দই। পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন হোক, পাশবিক নির্যাতন, বধূহত্যা, গৃহ নির্যাতন টা থাকুক, ও পরে দেখা যাবে, না এ কোনো কাজের কথা নয়। গেলে সব যাবে। লড়াই সব অসহিষ্ণুতা, সব কূপমনডুকতা, সব বর্বরতার বি্রুদ্ধেই।”
১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস