সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪৬:৪৪

ইতালিতে আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

ইতালিতে আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

আইরিন পারভিন খান: ঢাকার রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষুব্ধ, শোকাহত ইতালি। ঘটনার পর থেকে দেশটির গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম ঢাকা অ্যাটাক। দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে পরিস্থিতি। নিহত ৯ ইতালিয়ান নাগরিকের মরদেহ আনতে পাঠানো হয়েছে দুটি বিমান। সঙ্গে গেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। নেয়া হয়েছে নিহত নাগরিকদের স্বজনকেও। ইতালির প্রেসিডেন্ট বিদেশ সফর স্থগিত করে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি দফায় দফায় দেশবাসীকে পরিস্থিতি অবহিত করেছেন। ঘটনার দিন গভীর রাত পর্যন্ত তিনি তার কার্যালয়েই ছিলেন। পর্যবেক্ষণ করেছেন পরিস্থিতি।

ঘটনার দুই দিন পার হলেও এখানকার গণমাধ্যমে কেবলই ঢাকা অ্যাটাকের খবর। প্রধান শিরোনাম। আলোচনা। পর্যালোচনা। দেশটির কট্টরপন্থি বিরোধী দল ক্ষুব্ধ। তারা অভিবাসী বিতাড়ণের পক্ষে। এখন তারা বড় করে আওয়াজ তুলেছে। ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। দেশটিতে অন্তত ৮০ হাজার বাংলাদেশি থাকেন। এর মধ্যে প্রচুর বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন। চাকরি-বাকরি করছেন। ইউরোপীয় অন্য দেশের চেয়ে এখানে অবৈধরা ভালোভাবেই থাকতে পারেন। তাদেরকে ইতালিয়ানরা মানবিক দৃষ্টিতে দেখে। ঘটনার পর থেকে এই অবৈধ বাংলাদেশিদের মধ্যে শঙ্কা ভর করেছে। তারা বাইরে বের হতে, কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এই মুহূর্তে হয়তো কোনো বাংলাদেশিদের ওপর হামলা হবে না। কিন্তু আইনি সুযোগ-সুবিধা অনেকাংশে কমে যাবে। অবৈধ বাংলাদেশিরা আর মানবিক দৃষ্টি পাবে না।


ঘটনার দিন ইউরো কাপের খেলা চলছিল। ইতালিয়ানরা অনেকে টিভি সেটের সামনে। খেলা চলার মধ্যেই ঢাকায় হামলার খবর আসে। এরপর সব গণমাধ্যমে তা ব্রেকিং খবর হিসেবে প্রচার হয়। প্রথমে ২০ জন জিম্মি হওয়ার কথা বলা হয়। এরপর জানা যায় তাদের হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান নাগরিক বলে জানানো হয়। এ খবরে শোকাহত হয়ে পড়ে গোটা ইতালি। রাজনীতিবিদ, সাধারণ নাগরিক সব দিক থেকেই প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইতালিয়ান নাগরিকরা নানামুখী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে থাকেন। তারা বাংলাদেশের সরকার এবং মিডিয়ারও সমালোচনা করেন।


গণমাধ্যমে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ঘটনাটিকে বড় করে দেখছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা আমাদের ওপর আঘাত। তবে আমাদেরকে দমানো যাবে না।
ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য ইতালিতে যাওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে। কম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ছাত্ররা আবেদন করে এখানে আসতে পারে। তাদের জন্য বিনা পয়সায় পড়ার কোটা আছে। প্রচুর বাংলাদেশি ছাত্র ইতালিতে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। হামলা ঘটনা তাদের এ সুযোগ সীমিত করে দিতে পারে।

গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশিদের  জন্য সিজোনাল ওয়ার্ক বা কৃষি ভিসা বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল তা খুলে দেয়ার। কিন্তু এ ঘটনার পর আমরা কোন্‌ মুখে এ দাবি জানাতে যাবো। হয়তো এ সুযোগ দীর্ঘ দিনের জন্যই বন্ধ হয়ে থাকবে। ইতালির গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে গদি নিয়ে টানাটানির ফলে এক দল আরেক দলের ওপর দোষারোপ করতে করতে আইএস দেশটিতে অবস্থান করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও তাই বলছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ বিদেশিদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে না পারলে তারা সামনে আরো বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।-এমজমিন

৪ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে