সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০১:৩৪:৩০

সৌদিতে দালালের খপ্পরে এক মমতাজ বেগমের আকুতি

সৌদিতে দালালের খপ্পরে এক মমতাজ বেগমের আকুতি

প্রবাস ডেস্ক : ‘আমি ভুল করেছি। আমাকে মাফ করে দে। উদ্ধার করে নিয়ে যা। তা না হলে আমি মরে যাবো। ওরা আমাকে খুব মারধর করে। পা তুলে দেয়। কান দিয়ে রক্ত পড়ে।’ দালালের খপ্পরে পড়ে সৌদি আরবে যাওয়া ষাটোর্ধ্ব মমতাজ বেগম এভাবেই দেশে ফিরে আসার আকুতি জানান তার মেয়ের কাছে।

তিনি কাউকে না জানিয়ে সৌদি আরবে গমন করেন। তার ভিসার মেয়াদ তিন মাস। তারা বলেছিলো সেখানে একজনের ডেলিভারি হবে। তিন মাস তার পরিচর্যা করতে হবে। তারপরই দেশে ফেরত পাঠাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়েছে।

এদিকে মমতাজের মেয়ে অভিযোগ করেছেন, রিক্রুটিং এজেন্সি তাকে সতর্ক করে দিয়েছে তার সৌদি গমনের কথা গোপন রাখতে। বলে, কাউকে জানানো যাবে না। এমনকি নিকট আত্মীয়-স্বজনদেরও। সহজ সরল মমতাজ বেগম তাই কাউকে না জানিয়েই দালালের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। এখন বৃদ্ধা মমতাজ বেগম ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তার ওপর চলছে নির্যাতন। তাই তিনি মারা যাওয়ার আগেই দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন সন্তানদের কাছে।

মমতাজ বেগম চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় স্বজনদের সঙ্গে বসবাস  করতেন। তার মেয়ে বেবী আক্তার মুনমুন জানান, মা প্রায়ই বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতেন। থাকতেন ছেলেদের সঙ্গে। বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন আগে তার নানার বাড়িতে (মমতাজের বাবার বাড়ি) যান। সেখান থেকেই দালাল তাকে ফুসলিয়ে সৌদি পাঠিয়েছে। কিন্তু কেউ জানতেও পারেনি। বাবার বাড়ির লোকজন ভেবেছিলো তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন।

কিছুদিন পর তার মা মমতাজ বেগম নিজেই সৌদি আরব থেকে ফোন করে জানান যে, দালালরা তাকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছে। মুনমুন জানান, এ সময় তিনি তার কাছে কাকুতি মিনতি করে বলেন, আমি কাউকে না জানিয়ে ভুল করেছি। আমাকে মাফ করে দে। উদ্ধার করে নিয়ে যাও। তা না হলে তাকে মেরে ফেলবে। তিনি যে বাসায় কাজ করেন তাদের ভাষা বোঝেন না। তাই মারধর করে। চোখে পানি দেখলেই মারধর করে। মুনমুন বলেন, তার মা বৃদ্ধা। বয়সের ভারে দাঁতও পড়ে গেছে।

সর্বশেষ গত ৩য় রোজার দিন তার মা তাকে ফোন করেছিলেন। সেদিনও তিনি নির্যাতনের কথা বলে উদ্ধারের জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। বলেন, প্রথম রোজার দিন তিনজন ধরে তাকে মারধর করে। নির্যাতনের কারণে তার হাত-পায়ের নখ পর্যন্ত ওঠে গেছে। মুনমুন বলেন, ওইদিনের পর থেকে তার মায়ের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।

এদিকে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিতে গেলে এজেন্সির মালিক পরিচয়ে আনিস নামে এক ব্যক্তি মমতাজ বেগমকে ফেরত আনা বাবদ দেড় লাখ টাকা দাবি করে। মুনমুন জানান, মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি প্যান আরব ইন্টারন্যাশনালের অফিসে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তারা ২০১৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর তার মাকে (মমতাজ বেগম) সাঈদ বিন সালেম বিন আবিজাহ আলে শাদিদ নামে এক সৌদির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছে।

পরে তিনি ও তার আত্মীয়-স্বজনরা ওই অফিসে গেলে এজেন্সি কর্তৃপক্ষ  জানায়, দেড় লাখ টাকা দিলে তাকে দ্রুত ফেরত আনা হবে। মুনমুন অভিযোগ করেন, তার মা লেখাপড়া জানে না। সে জন্য তাকে ওমরাহ হজের কথা বলে নিয়ে যায়। তাকে বলা হয়, সৌদিতে একজনের ডেলিভারি হবে। ওই সময়ে তিনি তার পরিচর্যা করবেন। পরে তিনমাসের ভেতরে ওমরাহ করে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনমাস পার হয়ে যাওয়ার পরও তাকে ফেরত পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

এ অবস্থায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা খুবই শঙ্কার ভেতরে রয়েছেন। এদিকে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিতে বারবার ধরনা দিয়েও এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে মমতাজ বেগমের মেয়ে বেবী আক্তার মুনমুন তার মাকে ফেরত আনার আর্জি জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে করা ওই আবেদনে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তার মাকে ফেরত আনার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি।

মমতাজ বেগমের প্রসঙ্গে আনিস বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি ফেরত আসবেন। ওমরাহ পালনের কথা বলে তাকে গৃহকর্মীর ভিসায় পাঠানো হয়েছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাছাড়া, সৌদি পাঠানোর আগে স্বজনদের না জানানোর কথাও অস্বীকার করেন তিনি। মানবজিমন     

২৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে