শনিবার, ০১ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:৪৭:৪৮

রিকশাচালক থেকে এসআই!

 রিকশাচালক থেকে এসআই!

নিউজ ডেস্ক: রিকশাচালক রাজু মোল্লা বেশ কিছুদিন ধরে পুলিশের এসআই সেজে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে এ ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার জামতলা গ্রামের এই বাসিন্দা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাবা সামাদ মোল্লা মারা যাওয়ার পর রাজু মোল্লার মা নাহার বেগম বিভিন্ন খাবার হোটেলে শ্রমিকের কাজ করেন। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে কয়েক বছর আগে স্ত্রী চলে গেছে তাকে ছেড়ে। একমাত্র শিশু ছেলেকে রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছে। আর রাজু মোল্লা রাজধানী ঢাকাসহ ফরিদপুর শহরে রিকশা চালাত। একপর্যায়ে তার পরিচয় হয় একটি প্রতারকচক্রের সঙ্গে। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে সে পুলিশের ভাষায় কথা বলা শেখে। সেই সঙ্গে পুলিশি পোশাক পরে সড়কে দাঁড়িয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা, গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার মতো কাজও রপ্ত করে। আর এ সুযোগে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে।

তা ছাড়া পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের অর্থ আত্মসাৎ, মোটরসাইকেল চালিয়ে পরীক্ষার নামে তা নিয়ে চম্পট দেওয়ার কাজও করছে নির্দ্বিধায়। র‌্যাব-৮ সদস্যদের কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য জানিয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার জামতলা গ্রামের বাসিন্দা প্রতারক রাজু মোল্লা। রাজুকে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাজবাড়ী জেলা শহরের শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের গোয়ালন্দ মোড় এলাকা থেকে র‌্যাব-৮ সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তখন রাজুর পরনে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের পোশাক ও আইডি কার্ড ঝোলানো ছিল।

র‌্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কম্পানি কমান্ডার) রইচ উদ্দিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা ওই দিন রাতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী জেলা সদরের গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় তল্লাশি চালায়। রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মামুন পরিবহনের একটি বাস সেখানে আসে। ওই বাসে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের পোশাক ও আইডি কার্ড ঝোলানো অবস্থায় তাঁরা রাজু মোল্লাকে দেখতে পান। তখন তার কথাবার্তা ও চালচলনে তাঁদের সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় কোন থানায় সে কর্মরত আছে। রাজু তাদের জানায়, সে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানায় কর্মরত। ওই থানায় খোঁজ নেওয়াসহ পুলিশের বিশেষ কিছু সাংকেতিক তথ্য জানতে চাওয়ার পরপরই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। রাজু ওই সব তথ্য সম্পর্কে অবহিত নয়। অথচ একজন সাব-ইন্সপেক্টরের ওই সব সাংকেতিক তথ্য জানা আবশ্যক। ফলে তখনই তাকে আটক করা হয় এবং ফরিদপুর র‌্যাব ক্যাম্পে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে সে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কম্পানি কমান্ডার) রইচ উদ্দিন আরো জানান, রাজু মোল্লা একটি প্রতারকচক্রের অন্যতম সদস্য। সে তার দলনেতাসহ অন্য সদস্যদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরে সড়কে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়, পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বরিশাল জেলা সদরের এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান করার পাশাপাশি ওই বাড়ি থেকে একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে চম্পট দেওয়ার তথ্য দেয়। গত ১৮ মার্চ এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে। বরিশালের কোতোয়ালি থানায় ওই পরিবারের পক্ষ থেকে রাজু মোল্লার নামে ওই দিনই সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারা ওই চক্রের দলনেতাসহ অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে রাজুকে বরিশালের কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।

গ্রেপ্তার হওয়া রাজু মোল্লা জানিয়েছে, সে নিতান্তই একজন হতদরিদ্র মানুষ। রিকশা চালানোই তার পেশা। কয়েক মাস আগে এক প্রতারকচক্রের দলনেতার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তার জীবন বদলে যায়। সেখানে তাকে তিন মাস পুলিশের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তার জন্য তৈরি করা হয় একটি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের ভুয়া আইডি কার্ড ও পোশাক। যে পোশাক পরে ওই দলনেতার নেতৃত্বে সে বেশ কয়েকটি অপকর্ম করেছে।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে