রাজশাহী থেকে : ‘বিছনাকান্দিতে বেড়াতে গিয়েছিল ছেলে। বাবাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল নেটওয়ার্ক পেতে অসুবিধা হচ্ছে। একবার ফোনে কথা হয়েছিল। আর ফোন এল না। ছেলে একেবারে নেটওয়ার্কের বাইরেই চলে গেল।’
বাড়ির সামনে বেঞ্চে বসে ছেলের কথা বলছিলেন বাবা মাহবুবুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দিতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান (২২)। মা-বাবা আদর করে তাকে ডাকতেন সিয়াম। তার সঙ্গে মারা যান সহপাঠী সাঈদ লতিফ (২৩)। তিনি গাইবান্ধার জামালপুরের নুরুল ইসলামের ছেলে। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছেন বাবা মাহবুবুর। রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় ছোট্ট একটা পানবিড়ির দোকান রয়েছে। সামান্য আয়ে সংসার চালিয়েছেন। মশিউরকে পড়িয়েছেন।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান মশিউর। এরপর ভর্তি হন বুয়েটে। তারা দুই ভাই। ছোট ভাই নিয়ামুর রহমান অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
শেখপাড়া মহল্লায় মাহবুবুরের বাড়িতে প্রতিবেশী আর স্বজনদের ভিড়। বাড়ির ভেতরে একটি ঘরে বিছানায় বসে অঝোরে কাঁদছেন মশিউরের মা রুমালি খাতুন। নিয়ামুর দাঁড়িয়ে মায়ের পাশে।
স্বজনেরা জানান, কয়েকজন মশিউরের মরদেহ আনতে সিলেটে গেছেন। সবাই মশিউরকে শেষবার দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
বাবা মাহবুবুর রহমান বললেন, স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল মশিউরের। ছেলেকে বলেছিলেন, ‘তাইলে তো মেলা টাকা লাগবে। আমি তাহলে এখন থেকেই একটু একটু করে জমানো শুরু করে দিই। ছেলে বলল জমাও। তুমি কিছু দিয়ো আর স্কলারশিপ পাইলে সরকারও তো টাকা দিবে।’
ছুটিতে বাড়ি এলেই মাঝেমধ্যে বাবার দোকানে বসতেন মশিউর। বাবা চাইতেন না বুয়েটে পড়া ছেলে পানবিড়ির দোকানে বসুক। ছেলে বলতেন, ‘আর তিন-চারটা বছর কষ্ট করলে দ্যাখো অনেক ভালো চাকরি পাব। তখন আর কষ্ট থাকবে না।’
ছেলেকে নিয়ে আরও অনেক কথা বলতে চান বাবা মাহবুবুর। সবটা বলে উঠতে পারলেন না। বললেন, ‘হিরের টুকরো ছেলে ছিল আমার...আহ্, আমি যে কী হারালাম, সবাইরে ক্যামনে বুঝাই!’ - প্রথম আলো
১৩ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস