রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের নিহত শিক্ষকের কন্যা বলেছেন, তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তিনি।
অধ্যাপক এএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার একদিন পর তার মেয়ে রেজওয়ানা হাসিন বলেন, সেদিন সোয়া ৮টায় তার ক্লাস ছিল। তিনি ৭টা চল্লিশের বাস ধরতে যাচ্ছিলেন। সেসময়ই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে- ওরা বেশ ভালোভাবেই তাকে অনুসরণ করেছে। পাঁচ সেকেন্ডের রাস্তা- মোড়ের ওখানে উনাকে কুপিয়ে চলে গেলো।'
কাঁদতে কাঁদতে হাসিন বলেন, 'আমার জন্মদাতা বাবার এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতেই শুধু চাই না, বিচার হলো মুখে, সেই রায়ও দেখতে চাই না, আমি ওই রায়ের কার্যকর হওয়াটাও দেখতে চাই। আমার মাকে দেখাতে চাই। আমার পরিবারের সদস্যদের দেখাতে চাই।'
তিনি বলেন, 'ঘর থেকে মানুষগুলো এভাবে জবাই হয়ে যাবে সেটা আর কতোদিন। কাল তো আপনাদেরও এরকম হতে পারে।'
শনিবার সিদ্দিকীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হাসিন জানান, তার বাবাকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি রাজশাহীতে ছিলেন না, ছিলেন ঢাকায়। টেলিভিশনে তিনি তার বাবাকে হত্যার খবর দেখেছেন।
তিনি বলেন, 'টেলিভিশনে আমি যে নির্মম দৃশ্য দেখেছি, কোনো সন্তানের পক্ষে সেটা আমৃত্যু ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।'
হাসিন বলেন, 'আমার বাবা ছিলেন ছিমছাম মানুষ। একদম সটান হয়ে পড়ে আছে। আর তার চারপাশে রক্তের বন্যা, চশমাটা দূরে পড়ে আছে। ব্যাগটা পড়ে আছে। কোনো শত্রুকেও যেনো তার বাবার এরকম মৃত্যু দেখতে না হয়।'
নাস্তিক হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে- ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এই দাবি প্রসঙ্গে নিহত শিক্ষকের কন্যা বলেন, তার বাবা একদমই নাস্তিক ছিলেন না।
তিনি বলেন, 'নাস্তিকতার যে কথাটা এসেছে সেটা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।'
হাসিন জানান, তার বাবা নিয়মিত জুম্মার নামাজ আদায় করতেন। সেটা তিনি করতেন দেশের বাড়ির মসজিদে।
তিনি বলেন, 'দেশের বাড়ির প্রতি তার খুব টান ছিল। শহরের মসজিদে নামাজ পড়ার ব্যাপারে তিনি একটু অনিয়মিতই ছিলেন। আমার আব্বুর দুই-তিনটা টুপিও আছে। আমার দাদীকে বলতেন- আম্মা, দেখেনতো আমাকে কোন টুপিতে ভালো লাগছে।'
হাসিন মনে করেন, ভুল বোঝাবুঝি থেকে নাস্তিকতার এই কথাটা এসে থাকতে পারে। তার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার না ছড়ানোরও অনুরোধ জানান তিনি।
তার বাবা একজন স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন জানিয়ে হাসিন বলেন, 'আমার আব্বু সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। হয়তো এমন হয়ে থাকতে পারে যে তিনি কিছু একটা বুঝিয়েছেন, সেটা হয়তো ভুল বুঝেছে। তিনি দুর্নীতি আর খারাপ জিনিসের প্রতিবাদ করতেন।'
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্যে তার বাবার কাছে অনেক প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু একদিনের জন্যেও তিনি সেখানে পড়াতে যাননি।
হাসিন নিজেও তার বাবার একজন ছাত্রী ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
হাসিন বলেন, 'সবার বাবা সবার কাছে প্রিয়। কিন্তু বিভাগের শিক্ষার্থীরাও জানেন, আমার বাবা ভালো একজন মানুষ ছিলেন।-যুগান্তর
২৫ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ