পায়ের আঙুলে কলম ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে সুরাইয়া
শেরপুর প্রতিনিধি : পরীক্ষা কক্ষে সবাই বেঞ্চে বসে খাতায় লিখে যাচ্ছে প্রশ্নের উত্তর। তাদের পাশেই বসে পা দিয়ে লিখছে আরেক শিক্ষার্থী সুরাইয়া জাহান (১৪)। বিশেষ কৌশলে ডান পায়ের দুই আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে মনোযোগ দিয়ে লিখে যাচ্ছে সে।
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমী পরীক্ষা কেন্দ্রে এভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরাইয়া জাহান। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তাকে দমাতে পারেনি।
শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় গ্রামের মো. সফির উদ্দিনের মেয়ে সুরাইয়া। তার দুটি হাতই বাঁকা ও শক্তিহীন। ঘাড়ও খানিকটা বাঁকা। মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারে না সে। হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। মনের জোরে ডান পায়ে কলম ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
প্রতিবন্ধিতার কথা জেনেও হাল ছাড়েননি সুরাইয়ার বাবা সফির। ছয় বছর বয়সে সুরাইয়াকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করান আন্ধারিয়া সুতিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১২ সালে জিপিএ-৩ দশমিক ৭৫ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে সে।
এরপর ভর্তি হয় আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বছর ওই বিদ্যালয় থেকেই জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সুরাইয়া। সুরাইয়ার বাবা সফির উদ্দিন সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সুতিরপাড় দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট।
তিনি বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে সুরাইয়া বড়। জন্ম থেকেই সে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার কথাও অস্পষ্ট। তার দুটি পা ভালো আছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে সে যেন সমাজের বোঝা না হয়, সবার কাছে এই দোয়া চাই।
প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী হিসেবে নির্ধারিত সময় তিন ঘণ্টার চেয়ে ২০ মিনিট সময় বেশি পায় সুরাইয়া। পরীক্ষার কক্ষে পা দিয়ে কলম ধরে খাতায় লিখে সুরাইয়া। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ার প্রতি ভীষণ আগ্রহ সুরাইয়ার। অসুস্থ না হলে নিয়মিতভাবে সে স্কুলে উপস্থিত থাকে।
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে সুরাইয়ার দৃঢ় মনোবল। লেখাপড়া শিখে বাবার মতো শিক্ষক হতে চায় সে। সুরাইয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মনের জোরে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
৯ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর
�