শরীয়তপুর থেকে: পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এই সেতু উন্নয়নের প্রবেশদ্বার। শুধু কম সময়ে যোগাযোগের দ্বারই উন্মুক্ত করবে না এই সেতু, শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষিখাত, পর্যটন শিল্পসহ নানা ব্যবসায় প্রসার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে করবে সমৃদ্ধ।
শুধু শরীয়তপুর জেলা নয় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান নিয়ে যাবে বিশেষ উচ্চতায়। বিশেষ করে শরীয়তপুরের কৃষি খাতে আসবে ব্যাপক অর্থনৈতিক সফলতা। দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শরীয়তপুরের কৃষি খাত।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সংবাদে কৃষকদের মাঝে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের। কৃষি বিভাগও ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পাশে থেকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নির্দেশনা প্রদান করছেন। কৃষি বিভাগ পদ্মা সেতুকে ঘিরে সম্ভাবনাময় ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে জাজিরা উপজেলায়।
সেতু পারাপারে দ্রুত সময়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য রাজধানীতে বিক্রি করে লাভবানের প্রত্যাশায় তারা চাষাবাদে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইতঃপূর্বে জাজিরায় মিরাসা চাষি বাজার নামে একটি পাইকারি বাজার গড়ে তোলা হলেও বিগত সময়ে নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা শরীয়তপুরে কম আসতো।
ফলে শরীয়তপুরে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত আলু, টমেটো, কাঁচামরিচ, শসা, করলা ও বেগুনসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদনকারী চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই এলাকার প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই বলে মনে করেন এই এলাকার কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞমহল।
এ ছাড়া পদ্মা সেতুকে ঘিরে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। দ্রুত গতিতে চলছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লির কাজও। ফলে দ্রুত বদলে যাবে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা। এখন অপেক্ষা শুধু সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা জাকারিয়া মাসুদ বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্য শীতকালীন সবজি ও মসলাসহ অন্যান্য পণ্য শরীয়তপুরের বাইরে নেয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হওয়ায় আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। ফলে কৃষি সেক্টর ছিল অনেকটাই অলাভজনক। পদ্মা সেতু চালু হলে কেটে যাবে আমাদের যোগাযোগের সঙ্কট। বাড়বে এই খাতে বিনিয়োগ। এগিয়ে যাবে শরীয়তপুরের কৃষি খাত।
শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, কৃষি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। যা শুধু এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে না বরং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
কৃষি বিজ্ঞানী কবি মফিজুল ইসলাম বলেন, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। আর পদ্মা সেতু সেই যোগাযোগের ব্যবস্থার পালের দিবে নতুন হাওয়া, যা শরীয়তপুরের কৃষিকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। এই অঞ্চলের কৃষিব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রসুল বলেন, জাজিরাসহ শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা চাষে রসুন পেঁয়াজ এবং পাটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ মসলা জাতীয় ফসল ও সবজি উৎপাদন হয়। যা পদ্মা সেতু দিয়ে কৃষকরা ঢাকার বাজারে বিক্রি করে বেশি লাভবান হবে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে সড়ক পথে ঢাকার বাজার কাছে হওয়ায় জাজিরায় আমরা ফুল চাষকে সম্ভাবনাময় ফসল মনে করছি। ইতোমধ্যে আমরা জাজিরায় কৃষকদের ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। খুব সকালেই এই এলাকার ফুল চাষিরা ঢাকার বাজারে আকর্ষণীয় দামে ফুল বিক্রি করতে পারবে। ফলে কৃষি খাতে শরীয়তপুরে ব্যাপক সফলতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।