শরীয়তপুর প্রতিনিধি : গরিব বলে কথা, এজন্য কিশোর-কিশোরীকে একসঙ্গে বেঁধে জুতাপেটা করা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচরে এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে।
১৩ দিন আগের ঘটনা হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকির কারণে তা এতদিন জানাজানি হয়নি। কিন্তু শনিবার ইউটিউব ও ফেসবুকে ঘটনার ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিত কিশোরী আইরিন আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সে ঘাটকুল গ্রামের হতদরিদ্র সোনামিয়া ছৈয়ালের মেয়ে। প্রেমিক কিশোর স্বপন একই গ্রামের দরিদ্র আসমত আলী খাঁর ছেলে।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বপন ও আইরিনের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুজনকে আটক করে স্থানীয়রা। তাদের দাবি, এই কিশোর যুগল বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল।
এরপর তাদের ধরে কুন্ডেরচর আবদুল মান্নান মল্লিক কান্দি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যান স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন ও সুলতান মল্লিক। তাদের নেতৃত্বে প্রেমিক যুগলকে এক রশিতে বেঁধে উপর্যুপরি জুতাপেটা করা হয়।
পরে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতিত কিশোর-কিশোরীকে স্কুল মাঠে ঘোরানো হয়। রাতে স্কুলের একটি ভবনে আটকে রেখে তাদের দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়। আইরিন ওই স্কুলেরই ছাত্রী।
১০ ফেব্রুয়ারি ঘটনার খবর পেয়ে অভিভাবকরা এসে মারাত্মক আহত স্বপন ও আইরিনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। গত ১৩ দিনেও তারা সুস্থ হয়ে ওঠেনি।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আজ রোববার কিশোরী আইরিনের পরিবার জাজিরা থানায় মামলা করতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারেননি।
মামলা করলে প্রভাবশালীরা তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইরিনের বাবা সোনামিয়া ছৈয়াল।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, অসামাজিক কার্যকলাপ করার কারণে তাদের সামাজিকভাবে বিচার করা হয়েছে। আমি তাদের নির্যাতন করিনি।'
কুন্ডেরচর ইউপির চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন বেপারী বলেন, প্রেমিক যুগলকে ধরে প্রশাসনের কাছে না দিয়ে আইন হাতে নিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এটা চরম অন্যায়। এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি সাংবাদিকদের কাছে শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম