দিনমজুর মোখলেছ গাজীর মেয়ে নাহিদা আক্তার। প্রায় চার বছর আগে থেকে নাহিদাকে বিভিন্ন সময়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল নাহিদ ছৈয়াল। নাহিদা একই গ্রামের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন।
স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাকে যৌন হয়রানি করতো নাহিদ। একপর্যায়ে নাহিদের অত্যাচার সহ্য সহ্য করতে না পেরে দশম শ্রেণীতে উঠে ২০১২ সালে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন নাহিদা। এরপরও বিভিন্ন সময় নাহিদাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকে নাহিদ ছৈয়াল।
কিন্তু নাহিদ গ্রাম-সম্পর্কে ভাগ্নে হওয়ায় তার প্রস্তাবে রাজি হননি নাহিদা। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নাহিদা সম্পর্কে বিভিন্ন কুৎসা রটাতে শুরু করে বখাটে নাহিদ।
মঙ্গলবার রাতে নাহিদাদের বাড়ির আবু তাহের গাজীর মেয়ে আলো আক্তারের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আসে নাহিদ ছৈয়াল। এ সময় বাড়ির অনুষ্ঠানে নাহিদাও অংশ নেন। রাতে নাহিদা একই বাড়ির বাবলু গাজীর ঘরে গেলে নাহিদ ছৈয়াল তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে।
এভাবে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাকে উত্ত্যক্ত করে ও প্রেমের প্রস্তাব দেয়। নাহিদা বিষয়টি তার বান্ধবী জান্নাতকে জানান। পরে জান্নাতের সহায়তায় তিনি ওই ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। বিষয়টি পরে নাহিদা তার মা-বাবাকেও জানান।
কিন্তু পরিবারকে জানানোর কারণে সকালে বাবলু গাজী ও বখাটে নাহিদের মামা নান্নুগাজী নাহিদাকে গালিগালাজ করে খারাপ অপবাদ দেন। ফলে মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে বাবলু গাজীর ঘরেই নাহিদা অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তার গায়ে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হয়। জ্ঞান ফিরে আসার পর নাহিদাকে তার মা নিজেদের ঘরে নিয়ে যান। কিন্তু ঘরের মধ্যে মেয়েকে রেখে আবার বিয়ে বাড়িতে আসেন নাহিদার মা আনোয়ারা বেগম।
এই ফাঁকে খালি ঘরে কীটনাশক নিয়ে তা বাবলু গাজীর ঘরে গিয়ে পান করেন নাহিদা। কীটনাশক পান করার পরে নাহিদা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। প্রথমে তাকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়।
হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই তিনি মারা যান। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নাহিদার বান্ধবী জান্নাত আক্তার বলেন, আমরা একইসঙ্গে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। সে সময় স্কুলে যাওয়ার পথে নাহিদ ছৈয়াল নাহিদাকে উত্ত্যক্ত করত।
নাহিদার মা আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিন বছর ধরে নাহিদ ছৈয়াল আমার মেয়েটাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ওর জন্য মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমার মেয়েটিকে বখাটে নাহিদ বাঁচতে দিল না।
তিনি বলেন, ওই বখাটের উৎপাতেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ কবিরুল ইসলাম বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২২ জানুয়ারি,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম