সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:৩৫:৪১

কাঁদতে কাঁদতে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন তরুণী

কাঁদতে কাঁদতে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন তরুণী

বগুড়া থেকে : গুমরে কাঁদছেন বগুড়ার সেই তরুণী। ইজ্জত হারিয়ে এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করছেন। নিজের ওপর বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন।

মেয়েটি বলেন, ইজ্জতও কেড়ে নিলো ওরা। আবার সালিশের নামে আমার ও মা’র মাথা ন্যাড়া করে দিলো। কার কাছে বিচার চাইবো? এমনিতে রুমকি আপা বলেছে, তোদের মারলে আমার কিছু হবে না। আমি তিনটি ওয়ার্ডের কমিশনার। পুলিশকে টাকা খাওয়াইলেই মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে।

তার আকুতি এই অপমান আর কেলেঙ্কারি নিয়ে তারা সমাজে কীভাবে বসবাস করবেন। কী হয়েছিল সেদিন? প্রশ্ন শোনে চুপ হয়ে যান মেয়েটি। এরপর তার ওপর চলা চার ঘণ্টার নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, এ বছর এসএসসি পাস করেছি। কিন্তু কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। প্রতিবেশী আলী আজম দিপু শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে আমি আগ্রহ প্রকাশ করি। গত ১৭ই জুলাই তুফান সরকার কলেজে ভর্তি করে দেয়ার কথা বলে আমাকে বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নেই।

মেয়েটি বলেন, বাসায় প্রবেশের পর আমাকে আটকে ফেলে এক রুমে। কয়েক দফা সম্ভ্রমহানী করে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমার চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। একই সঙ্গে বিষয়টি কাউকে না জানানোর ভয় দেখানো হয়। ঘটনাটি তার মাকে জানান। এক কান, দুই কান করে ঘটনাটি তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন ও তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি জানতে পারেন।

শুক্রবার বিকালে রুমকি আমি ও আমার মাকে তার অফিসে ডেকে নেয়। সেখানেই চালানো হয় মা-মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতন। রুমকির বাসায় যাওয়ার পরই তুফান সরকারের স্ত্রী আশা গুণ্ডা নিয়ে আসে সেখানে। কিছু বুঝার আগেই আমি ও আমার মাকে পেটাতে থাকে। এ সময় তাদের পা ধরে বাঁচার আকুতি জানিয়েছি। কিন্তু ওরা কোনো কথাই শুনছিল না।

তারপর রুমকি, আশা ও বেশ ক’জন মানুষ মিলে আমি ও আমার মায়ের মাথার চুল কেটে ছোট করে দেয়। পরে নাপিত ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি হায়েনারা। ওরা আমাদের একটি রিকশায় তুলে বগুড়া শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় এসিড দিয়ে আমাকে ঝলসে দেয়ারও হুমকি দেয়। বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নির্যাতিতা মেয়েটি তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে উঠেন।

এ সময় মেয়েটির মা বলেন, আমাদের বিচার করে দেয়ার কথা বলে রুমকি তার অফিস চকসূত্রাপুরে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওরা আমার মেয়েকে পতিতা আখ্যা দেয়। আর আমাকে মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগ আনে। এরপরই তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী স্টিলের পাইপ দিয়ে আমাদের পেটাতে থাকে। টানা চার ঘণ্টা ঘরের ভেতর আটকে রেখে দফায় দফায় আমাদের পিটিয়েছে। পরে মাথা ন্যাড়া করে রিকশায় তুলে দেয়। বলে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে।

মেয়েটির আরো মা বলেন, বাবারে আমাদের তো সবই শেষ। ইজ্জত গেছে, সম্মান গেছে। আমাদের এখন বেঁচে থাকা না থাকা সমান কথা। তাছাড়া এত কেলেঙ্কারি নিয়ে এই মুখ মানুষকে দেখাবো কি করে?
 
নির্যাতিতা মেয়েটি বলেন, আমাদের ওপর অত্যাচার চালানোর পর ওরা সাদা কাগজে জোর করে আমি ও মা’র স্বাক্ষর নিয়েছে। আমারই যদি দোষ হতো, তাহলে ওরা পালাল কেন? আমি মানুষরুপী হায়েনাদের বিচার চাই। এমজমিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে