মনিকা চৌধুরী, বরিশাল : নামফলকে বায়তুল আমান লেখা থাকলেও গুঠিয়া কিংবা সান্টুর মসজিদ নামেই চেনে সবাই। বরিশাল নগরী থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বরিশাল-স্বরুপকাঠী সড়কের পাশে নির্মিত এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি আধুনিক নির্মান শৈলীর এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
কেবল নির্মাণ কৌশল আর দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্যের কারণে এটি এখন কেবল ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, পরিণত হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রে। দেশ বিদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন দেখতে আসে এই মসজিদের অপরুপ সৌন্দর্য্য। বিমোহিত হয় এর গঠন কাঠামো আর চারপাশের সবুজে ঘেরা প্রকৃতির ছোঁয়ায়।
২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়া মসজিদটি গড়ে উঠেছে ১৪ একর জমির উপর। বর্তমানে সিঙ্গাপুর প্রবাসী ব্যবসায়ী সারফুদ্দিন সান্টু মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা।
প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে টানা ১৪ বছরের পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এই মসজিদের নির্মাণকাজে যুক্ত ছিলেন ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক। নির্দিষ্ট কোনো স্থাপত্যবিদের ডিজাইনে নয়, মসজিদ নির্মাণে নিজস্ব পরিকল্পনাই ব্যবহার করেন সমাজসেবী সান্টু। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে এই তথ্য দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে থাকা দৃষ্টি নন্দন মসজিদগুলো থেকে নির্মানের এই ধারনা মিলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
১৯৩ ফিট উচু বিশাল উচ্চতার মিনার ঘিরে গড়ে ওঠা এই মসজিদের প্রতিটি দেয়ালই যেন স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নির্দশন। মিনার আর মসজিদের বিভিন্ন দেয়ালে খচিত আছে আয়াতুল কুরসি, আর রহমানসহ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরার আয়াত।
ছোট ছোট গম্বুজ, মিনারের ভাজ, নামাজের জায়গায় থাকা সৌন্দর্য্য খচিত টাইলস, দেয়ালে ব্যবহৃত রঙ-বেরংয়ের পাথর, সবমিলিয়ে পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সটি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অপরুপ ছবি।
মহাসড়কের পাশে থাকা মসজিদ কমপ্লেক্সে ঢুকলেই হাতের ডান পাশে একটি স্বচ্ছ পানির পুকুর। আছে শান বাধানো ঘাটলা। পুকুরের চারপাশে নানা ফুল ফলের গাছ। কেবল পুকুরের চারপাশই নয়, পুরো কমপ্লেক্সজুড়েই পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ফুল ও ফলের বাগান। পুকুরের ঠিক বিপরিতেই মসজিদে ঢোকার প্রধান ফটক।
মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে মালিকা বেগম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা সারফুদ্দিন সান্টুর মায়ের নামে এটি প্রতিষ্ঠিত বলে জানান মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
কমপ্লেক্স দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ‘মসজিদের ভেতরে একসঙ্গে পনেরশ’ লোক নামাজ পড়তে পারে। মুসুল্লির সংখ্যা বেশী হলে ভেতর এবং আঙিনা মিলিয়ে নামাজ পড়তে পারেন ৫ হাজার মানুষ। বরিশাল অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ঈদ জামাতের স্থান এই কমপ্লেক্সে ঈদের দিন একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে ২০ হাজার মানুষ।
পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের জন্যও এখানে রয়েছে নামাজ পড়ার পৃথক স্থান। পুকুরে যেমন অজু করা যায় তেমনি ভেতরেও রয়েছে অজুর ব্যবস্থা।
দিনের ৫ বার ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি দুই ঈদ, শবে বরাত, শবে কদরসহ অন্যান্য বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় দিনগুলোতে এখানে আয়োজন করা হয় বিশেষ জামাতের।
নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে শক্তিশালী জেনারেটর। বিদ্যুৎ চলে গেলেও তাই আলো হীন হয়ে পড়ে না মসজিদ কমপ্লেক্স। রাতে যখন কমপ্লেক্সের সব বাতি জ্বলে ওঠে, তখন যেন তৈরী হয় বিমুগ্ধতায় ছাওয়া এক অপার্থিব পরিবেশ। যে পরিবেশে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সৎ পথে চলতে। সততা আর বিবেক দিয়ে গড়তে নতুন জীবন।-যুগান্তর