এমটিনিউজ ডেস্ক: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ছে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গরুর মালিক ও খামারিরা।
পল্লী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে জ্বর উঠে যায়। তারপর শরীরের কয়েক জায়গায় গুটি উঠতে শুরু করে। অল্পদিনের মধ্যে সারা শরীরেই গুটি ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়া। একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
জানা যায়, উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন খামারিরা। এই রোগের ফলে গরু থেকে মাংস ও দুধ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তবে এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দ্রুত রেজিস্ট্রারপ্রাপ্ত ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে গরুর মৃত্যু রোধকরা সম্ভব বলে মনে করছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ১৮৮টি ছোট-বড় খামার রয়েছে; যার মধ্যে ২৪ হাজার ৫৪৭টি গরু, ৮ হাজার ৫৪টি মহিষ, ১১ হাজার ৯৭৫টি ছাগল ও ৮ হাজার ৫৪টি ভেড়া রয়েছে। তার মধ্যে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাবে কত সংখ্যক গরু আক্রান্ত বা মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান দিতে পারেননি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
উপজেলার একাধিক খামারি ও কৃষকরা বলেন, এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেকে কবিরাজ ও পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছেন। চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে তাদের গবাদিপশুর মৃত্যু হচ্ছে।
রসুলপুর ইউনিয়নের প্রান্তিক খামারি কামাল হোসেন বলেন, আমার খামারে ছয়টি গরুর মধ্যে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়েছে তিনটি। চিকিৎসকের পরামর্শে একটি সুস্থ হয়েছে। বাকি দুইটি গরুর একটি এখনো আক্রান্ত অন্যটি বাঁচাতে পারিনি।
জিন্নাগড় এলাকার কৃষক কামাল মিঝি বলেন, আমার একটিমাত্র বাছুর গরু ছিল, যা লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার মারা গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার রহমত উল্লাহ বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তাই এ রোগের সরাসরি কোনো চিকিৎসা নেই। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করার জন্য লক্ষণ দেখে চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হয়। মশা-মাছি ও রক্ত খায় এমন পতঙ্গের মাধ্যমে এক গরু থেকে আরেক গরুতে এ রোগ অল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ পশু চিকিৎসকদের এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে বলা হয়েছে।