বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট, ২০১৬, ০৯:৫০:১১

যেভাবে সপরিবারে নিখোঁজ ব্যারিস্টার তাকিউর

যেভাবে সপরিবারে নিখোঁজ ব্যারিস্টার তাকিউর

বগুড়া : বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকার ব্যারিস্টার একেএম তাকিউর রহমান।  গত বছরের ৪ এপ্রিল স্ত্রী রিদিতা রাহেলা ও মেয়ে রুমাইশাকে নিয়ে ওমরাহ পালনে ঢাকা ছাড়েন।

এরপর থেকে তাদের সন্ধান না পেয়ে বাবা ব্যবসায়ী আবদুল খালেক ওই বছরের ৯ জুন ঢাকার কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

এর ৩-৪ মাস পর অজ্ঞাত স্থান থেকে তাকিউর পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ভালো স্থানে ও ভালো আছেন বলে জানান।

এরপর এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।  পরিবারের কেউ বিশ্বাস করছেন না যে, তাদের তাকি জঙ্গি হতে পারে।

গত বুধবার ‌‘৯ ব্যক্তির সন্ধানে আইনশৃঙ্খালা বাহিনী’ এ রিপোর্ট প্রকাশ হবার পর ছবি দেখে স্বজন ও এলাকাবাসী তাকিউরকে চিনতে পারে।

বগুড়া শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল খালেক জানান, তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে একেএম তাকিউর রহমান সবার বড়।

১৯৯৬ সালের দিকে ছেলেকে ভারতের দার্জিলিংয়ের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি করান তার বাবা।  

২০০৪ সালে সেখান থেকে 'ও' লেভেল পাস করেন। ২০০৬ সালে ঢাকার লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে 'এ' লেভেল পাস করেন।

এরপর তাকে লন্ডনের ক্যানটারবেরি ক্যান্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করা হয়।  সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন ২০০৯ সালে।

পরের বছর লন্ডন থেকেই বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) শেষ করেন তিনি।  পড়া শেষে ধর্মীয় বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেন তাকিউর।

বাধ্যতামূলক ইন্টার্নি শেষে ২০১১ সালের প্রথম দিকে দেশে ফেরেন তাকিউর।  এরপর ঢাকা হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের পাশাপাশি লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ, ভুঁইয়া একাডেমিসহ ৪-৫টি প্রতিষ্ঠানে আইন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজের পছন্দে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ ইকবালের মেয়ে রিদিতা রাহেলাকে বিয়ে করেন।  এরপর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার কলাবাগানের বসির উদ্দিন রোডের ১৪, লেক সার্কাসে একটি ফ্লাটে (৮/বি) বসবাস করতে থাকেন।

বগুড়ার বাড়িতে খুব কম যেতেন।  হাইকোর্টে প্র্যাকটিস, টিউশনি ও শিক্ষকতা করে মাসে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করতেন বলে পরিবারকে জানিয়েছেন তিনি।

আবদুল খালেক বিয়ের পর কখনো বেয়াই বাড়িতে যাননি।  তাকিউর হঠাৎ করে দাঁড়ি রাখে ও ধর্মীয় কাজে উৎসাহী হয়ে পড়ে।

আবদুল খালেক জানান, গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে তাকিউর ফোনে তাকে জানায়, স্ত্রী রিদিতা রাহেলা ও দেড় বছর বয়সী মেয়ে রুমাইশাকে নিয়ে ওমরাহ হজ পালন করতে যাবে।

তিনি তাকে জানান, ভালো মোয়াল্লিম পেয়েছেন এবং খরচ কম হবে।  ৪ এপ্রিল স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তাকিউর হজে যান।  ১৩ এপ্রিল ফোনে আত্মীয়-স্বজনকে জানান, তারা সৌদি আরবে আছেন।  ওমরাহ শেষে ২২ এপ্রিল দেশে ফিরবেন।

কিন্তু তারা ওই তারিখে দেশে ফেরেননি।  ছেলের কোনো বিপদ হয়েছে কি-না বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন কি-না এটা ভেবে থানায় জিডি করতে যান তার বাবা।

তিনি বেয়াই কর্নেল (অব.) ইকবালের সহযোগিতায় কলাবাগান থানায় জিডি করেন।

এদিকে জিডি করার ৩-৪ মাস পর তাকিউর অজ্ঞাত নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে বলে, তারা একটা ভালো দেশে আছেন।  এভাবে অজ্ঞাত ফোন নম্বর ও দেশ থেকে ৩-৪ বার ফোন দেয় তাকিউর।  এরপর আর ফোন দেয়নি তাকিউর।

তার বাবা আবদুল খালেকের বিশ্বাস, ছেলে, বউমা ও নাতনি তুরস্ক বা সিরিয়ায় আছে।

এদিকে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে মর্মান্তিক ঘটনায় ব্যবসায়ী আবদুল খালেকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।  তিনি প্রায় ২০ দিন আগে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে তার ছেলে নিখোঁজের কথা অবহিত করেন।  তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও ছেলের ছবি দেন।

আবদুল খালেক ও স্বজনদের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে, তাদের আদরের মেধাবী ছেলে তাকিউর আইএস বা জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়েছে।
৪ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে