বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৫৩:৩০

১৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হন মারজান

১৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হন মারজান

চট্টগ্রাম থেকে : দ্বিতীয় বর্ষের সব পরীক্ষা না দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়েছিল গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন মাস্টার মাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজান। এরপর থেকে সে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি। যোগাযোগ ছিল না পরিবারের সঙ্গেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের এ
শিক্ষার্থী এই দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত থাকলেও ওই বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তার নিখোঁজের বিষয়ে কিছু জানায়নি।

বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টরসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠক করে চবিতে তার ভর্তির বিষয়টি তদন্ত করেন। এই সময় বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। সরজমিন গতকাল সকালে এই বিষয়ে খোঁজখবর করতে আরবি বিভাগে গিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত মারজান গত ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তার ক্লাস উপস্থিতির খাতায় দেখা যায় নামের পাশে খালি ঘর রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ৬ ছাত্রের দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকার তালিকা তৈরি করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে মারজানের আরবি বিভাগ থেকে কোনো তালিকা পাওয়া না যাওয়ায় তার বিষয়টি অজ্ঞাত থেকে গেছে সবার কাছে।

মারজানের প্রকৃত নাম নুরুল ইসলাম। তবে বন্ধুদের মাঝে তিনি ফাহাদ নামে পরিচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলো এই যুবক। তার একাডেমিক রোল বা আইডি নম্বর ১৩১০৭০৩০। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন প্রথম বর্ষে সে জিপিএ ৩.৪৮ পেয়ে দ্বিতীয়বর্ষে উত্তীর্ণ হয়। এরপর সে দ্বিতীয়বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ১০টি কোর্সের মধ্যে ৫টি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০৫ নং কোর্সের আরবি সাহিত্য বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পর হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়।

আরবি বিভাগের শিক্ষকরা জানান, মারজান ২০১০ সালে পাবনার দারুল উলুম মারকাজিয় মাদরাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল পাস করে। ২০১২ সালে আলিম পাস করে আরিফুল জামিউল ফাজিল মাদরাসা থেকে। এরপর সে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। তার একাধিক সহপাঠী জানান, মারজান প্রথমবর্ষে নিয়মিত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বর্ষে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এরপর দ্বিতীয়বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সর্বশেষ ২০৫ নং কোর্সের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপরই সে নিখোঁজ হয়। তবে মারজান খুব শান্ত স্বভাবের ছিল বলে দাবি তার সহপাঠীদের।

তার কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোনো তথ্যও জানাতে পারেননি কোনো সহপাঠী। আরবি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে গতকাল কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন ঝুপড়িতে। তারা জানান, মারজান নামের যে ছেলের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার সঙ্গে এখানকার অনেক পড়ুয়ারই সুসম্পর্ক ছিল। কারণ তাকে দেখে কেউই বুঝতে পারেনি সে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী হল নামের একটি আবাসিক হোস্টেল রয়েছে।

গতকাল বেলা একটায় এ বিষয়ে সেখানে আরবি বিভাগের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে এক শিক্ষার্থী বলেন, মারজান আরবি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর আবাসিক হলে সিট পায়নি। সে ক্যাম্পাসের স্টেশনচত্বর সংলগ্ন আল হেরা কটেজে কিছুদিন ছিলো। অনেকে তাকে মারজান নামে চিনলেও কেউ কেউ বলছেন ফাহাদ নামেও তার আরেকটি পরিচয় রয়েছে। এই নামেও সে বিভাগে আসা-যাওয়া করতো। তবে মারজান ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে কাদের কাছে আসতো কিংবা সে কি ক্যাম্পাস নাকি শহরে মেস ভাড়া করে পরবর্তী সময়ে থাকতো তা নিয়ে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।

তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মারজান ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর অনেকের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। এসব বন্ধুর মধ্যে সে যদি জঙ্গিবাদী ধারণা তৈরি করে সেদিকে নিয়ে যায় তাহলে বিষয়টি সত্যি উদ্বেগের। মারজানের ঘটনার সূত্র ধরে গতকাল আরবি বিভাগে অভিযান চালিয়ে কিছু উস্কানিমূলক ধর্মীয় বই উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যদি এই ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তা আমাদের জন্য উদ্বেগের। একইসঙ্গে তার সহপাঠীদের মধ্যেও যাতে কেউ সন্ত্রাসী পথে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে খবরটি পাওয়ার পর প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, ঢাকার গুলশানের ঘটনাটি একটি কালো অধ্যায়। ভাবতে পারছি না বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা কিভাবে এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হয়। আমরা এর আগে নিখোঁজদের তালিকা করেছিলাম। সেখানে মারজান ছিলো না। এবার আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। - এমজমিন
১৭ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে