শামীম হামিদ : চট্টগ্রামে আলোচিত মিতু হত্যার তদন্তে নাটকীয় চমক আসতে যাচ্ছে। তদন্তের অগ্রভাগে এবার আসছেন মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার। স্ত্রীর হত্যাকান্ডের পর থেকেই তিনি নিরব আছেন। নিজে একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছেন সহজেই। অথচ নিজের স্ত্রী খুন হওয়ার পর তিনি ছিলেন চুপচাপ।
সারা দেশে যখন মিতু হত্যাকান্ড নিয়ে তোলপাড়, তখন বাবুল নিশ্চুপ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থাকে সহযোগিতা না করার অভিযোগও রয়েছে। এই নীরবতাকে মোটেই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে দেখছে না মামলার তদন্ত সংস্থা। তাই আর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না বাবুলের সামনে। এবার তাকে তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মিতু হত্যার মূল কুশীলব হিসেবে অভিযুক্ত মুসা পুলিশের খাতায় এখনো পলাতক। কিন্তু মুসা কার নির্দেশে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন সেটা জানতে বাবুলকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফের পুলিশ হেফাজতে নেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তিনি গ্রেফতারও হতে পারেন বলে সিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র আভাস দিয়েছে।
সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার গতকাল বলেন, বাবুল আক্তার নিঃসন্দেহে একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। মিতু খুন হওয়ার পর তিনি তার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে তদন্ত সংস্থাকে সহযোগিতা করতে পারতেন। কিন্তু সেটা করেননি। এমনকি তদন্ত সংস্থার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগও তিনি করেননি। এ বিষয়টা স্বাভাবিক নয়। কেন বাবুল এমন করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। বাবুলকে মিতু হত্যা মামলার আসামি করা হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা বলার সময় এখনো আসেনি। আমরা আসলে মিতু হত্যার মূল সংগঠক মুসাকে খুঁজছি। গ্রেফতার হওয়া অপর আসামিরা মুসার নামই বলেছে। কিন্তু মুসা কার নির্দেশে মিতুকে খুন করেছে সেটা জানা দরকার। আর সেজন্য মুসাকে আমরা হন্যে হয়ে খুঁজছি।
মিতু হত্যার ১৯ দিন পর ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে ঢাকার বনশ্রী এলাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওই সময় বলেছিলেন কয়েকজন আসামির মুখোমুখি করার জন্য বাবুল আক্তারকে বাসা থেকে আনা হয়েছিল। একইদিন বাবুল আক্তার পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তবে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি বলে বাবুলের শ্বশুর পরে দাবি করেন।
অন্যদিকে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তার স্বামীকে ২২ জুন নগরীর বন্দর এলাকার একটি বাসা থেকে পুলিশ আটক করে। এরপর তাকে ঢাকায় নিয়ে বাবুলের মুখোমুখি করানো হয়। কিন্তু এরপর তার স্বামীর সাথে তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, বাবুল আক্তার আসলে কেনো পদত্যাগ করেছেন সেটা আমার জানা নেই। তিনি হয়তো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তিনি পদত্যাগ প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন, যা প্রচলিত আইনে করার কোনো সুযোগ নেই।
গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সূত্র : ইত্তেফাক
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি