শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৭:২৯:১৩

দুই লাখ টাকায় চট্টগ্রামে বিএমডব্লিউ!

দুই লাখ টাকায় চট্টগ্রামে বিএমডব্লিউ!

মাসুদ মিলাদ, চট্টগ্রাম : ব্যাপক প্রচারণার পরও নিলামে তোলা কাস্টমসের ৮৫টির মধ্যে ২৬টি গাড়ি কিনতে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। এর মধ্যে বিএমডব্লিউ, লেক্সাস, মাসির্ডিজ, জাগুয়ার, ফোর্ডের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়িও রয়েছে। অবশ্য এগুলো সবই পুরোনো গাড়ি। সর্বনিম্ন ১১ থেকে সর্বোচ্চ ২১ বছরের পুরোনো গাড়িও রয়েছে।

নিলামে ৫৬টি গাড়ি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এসব গাড়ি সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৯ বছরের পুরোনো। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দর উঠেছে ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের রেঞ্জ রোভার মডেলের (স্পোর্ট এইচএসই) ১০ বছরের পুরোনো একটি গাড়ির। এর দর উঠেছে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। বাজারে ১০ বছরের পুরোনো এই গাড়ির দাম দেড় কোটি টাকার বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের রেঞ্জ রোভার (ভোগ) মডেলের ১০ বছরের পুরোনো একটি গাড়ির দর উঠেছে সাড়ে ৪১ লাখ টাকা। বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ‘৩১৬১ এসই’ মডেলের ১৭ বছরের পুরোনো একটি গাড়ির দর উঠেছে দুই লাখ টাকা। আবার একই ব্র্যান্ডের এক্স-৫ সিরিজের ১৫ বছরের পুরোনো আরেকটি গাড়ির দর উঠেছে ৪৫ লাখ ১ হাজার টাকা। ১৮ বছরের পুরোনো মার্সিডিজ এলিগ্যান্স মডেলের গাড়ির দর উঠেছে চার লাখ টাকা। একই ব্র্যান্ডের ১৫ বছরের পুরোনো আরেকটি গাড়ির সর্বোচ্চ দর ৩৫ লাখ টাকা।

অনলাইনে গাড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান কারমুডির তথ্য অনুযায়ী, বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ৩ থেকে ১২ বছরের পুরোনো গাড়ি এখন দেশে পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৯৫ লাখ টাকায়। মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের ২ থেকে ১৩ বছরের পুরোনো গাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ২৬ লাখ থেকে ৮১ লাখ টাকায়।

নিলামে তোলা গাড়িগুলো পর্যটন-সুবিধায় যুক্তরাজ্য থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকেরা। পর্যটন-সুবিধায় গাড়ি খালাসে কড়াকড়ির কারণে এসব গাড়ি বন্দর থেকে কেউ খালাস করেননি। বন্দরে কনটেইনারের ভেতর এই গাড়িগুলো পড়ে ছিল পাঁচ থেকে ছয় বছর।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, নিলামে ২০-২৫টি গাড়ির ভালো দর উঠলেও বাকিগুলোর দর পড়েছে কম। আবার দরদাতাদের মধ্যে সাড়াও ছিল কম। ছয়টি প্রতিষ্ঠান ঘুরেফিরে ৩৪টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন। বাকি ২৫টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হন ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। গত ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতাদের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করে কাস্টমস।

নিলামে অংশ নেওয়া দরদাতারা জানান, পাঁচ-ছয় বছর না চালানোর কারণে পুরোনো গাড়িগুলোর অনেক কিছুই অকেজো হয়ে গেছে। এসব গাড়ি রাস্তায় চালাতে হলে নতুন করে অনেক যন্ত্রাংশ সংযোজন করতে হবে। এ কারণে একই ব্র্যান্ডের গাড়ির নিলাম দরের ব্যবধানও কম-বেশি হয়েছে।

র্যাং গ্স গ্রুপের হেড অব মার্কেটিং খান এম সাকিব উস সালেহীন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, গাড়ির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ও মডেলভেদে দাম কম-বেশি হয়। বাংলাদেশে নতুন ব্র্যান্ডের মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় গাড়িগুলোর দাম ৭০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে। বিএমডব্লিউর দামও প্রায় একই রকম।

নিলামের সর্বোচ্চ দরের গাড়ির তালিকা এবং কাস্টমসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছয় বছর আগে যুক্তরাজ্যের নাগরিক নাজি চৌধুরীর ফেলে যাওয়া ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের গাড়িটির সর্বোচ্চ দর পড়েছে। পিএইপি ফ্যামিলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি নফ কনটিনুয়াস গ্যালভানাইজিং লিমিটেড এই গাড়ির দর দিয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। কালো রঙের ২ হাজার ৭২০ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির এই গাড়ির নির্মাণ সাল ২০০৬। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল ‘এমভি তেরা লুমিয়া’ জাহাজ থেকে নামানোর পর বন্দরের এক নম্বর ইয়ার্ডে একটি কনটেইনারের ভেতর পড়ে ছিল গাড়িটি।

জানতে চাইলে পিএইপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন গতকাল বলেন, ‘কাস্টমস যাতে গাড়িটি বিক্রির অনুমোদন দেয়, সে জন্য নিলামে এই গাড়ির সর্বোচ্চ দর দিয়েছি। আমরা সরকারকে সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়ে গাড়িটি কিনতে চাই।’

নিলামে সবচেয়ে কম দর পড়েছে সিলেটের বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শাহজাদ মিয়ার ফেলে যাওয়া বিএমডব্লিউ গাড়ির। দুই লাখ টাকায় এটি কিনতে চায় ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার র্যা নকন মোটর বাইকস লিমিটেড। এই গাড়ি আনা হয়েছিল ২০১১ সালে। ১৭ বছরের পুরোনো গাড়িটির সিসি ১ হাজার ৮৯৫। মডেল ৩১৬১ এসই।

দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিলামে সবচেয়ে বেশি দর পাওয়া গেছে ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর। একটির দর কোটি টাকা। এ ব্র্যান্ডের আরও চারটি গাড়ির দর পড়েছে যথাক্রমে ৯০ লাখ, ৮৭ লাখ, ৫৬ লাখ ও সাড়ে ৪১ লাখ। ২০১৪ সালে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব গাড়ির শুধু শুল্ক-কর নির্ধারণ করেছিল সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ভেদে দুই থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। তবে বয়স বাড়ায় দর হারিয়েছে এসব গাড়ি। এখন এসব গাড়ির সম্ভাব্য সংরক্ষিত মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে। ১০ থেকে ১৩ বছরের পুরোনো এই ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টাকা।

ল্যান্ড রোভারের পরই দর বেশি পাওয়া গেছে বিএমডব্লিউ গাড়ির। সিলভার রঙের বিএমডব্লিউ এক্স ৫ মডেলের গাড়ির দর পড়েছে ৪৫ লাখ ১ হাজার টাকা। ২০০১ সালে তৈরি গাড়িটির সর্বোচ্চ দরদাতা ঢাকার কাকরাইলের ‘নিবিড় নির্মাণ’। দুই লাখ টাকা দর পড়া গাড়িটি ছাড়া বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ১৫টি গাড়ির গড় দর পড়েছে সাড়ে ২৮ লাখ টাকা। এই ব্র্যান্ডের সাতটি গাড়ি নিয়ে আগ্রহই ছিল না দরদাতাদের।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর পড়েছে মার্সিডিজ ও টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের গাড়ির। কালো রঙের মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের ‘এমএল ২৭০ সিডিআই’ মডেলের গাড়িটির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩৫ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ দরাদাতা চট্টগ্রামের আসদগঞ্জের দেলোয়ার ব্রাদার্স। নীল রঙের মার্সিডিজ এলিগ্যান্স ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে চার লাখ টাকা। ১৭৯৬ সিসির এই গাড়ির বয়স ১৮ বছর। এ ব্র্যান্ডের চারটি গাড়ির কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি।

লেক্সাস ব্র্যান্ডের আটটি গাড়ির মধ্যে পাঁচটির দরদাতা পাওয়া গেছে। মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের জিপ গাড়ির দর পড়েছে সবচেয়ে কম। কোনো দরই পড়েনি জাগুয়ার, ফোর্ড ব্র্যান্ডের গাড়ির।

কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার রেজাউল হক বলেন, ‘প্রতিটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য (শুল্ক-করসহ গাড়ির সম্ভাব্য দাম) নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব গাড়ি প্রথমবার নিলামে উঠেছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ নিলাম দর এই সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব হলে যাচাই-বাছাই করে নিলামে বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যারা অনুমোদন পাবেন, তাঁদের গাড়ি খালাসের জন্য নিজ দায়িত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স পারমিট’ নিতে হবে। - প্রথম আলো

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে