চট্টগ্রাম থেকে : বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। প্রায় সাড়ে ছয় মাস পর বৃহস্পতিবার তাকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার বিভিন্ন বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন বাবুল। এর আগে ২৪ জুন রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। কিন্তু বাবুল জানান, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। নানা নাটকীয়তার পর ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মামলাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে বাদীকে সপ্তাহখানেক আগে আসতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাবুল আক্তার আসেন। এ মামলায় গ্রেফতার ও পলাতক আসামিদের সম্পর্কে তার কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে বাবুল আক্তার কিছু জানা নেই বলে জানান। মামলাসংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন করা হয় তাকে। অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপ ছিলেন তিনি। আবার কখনো অঝরে কেঁদেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ছিল না বলেও জানিয়েছেন। বাবুল এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।
বাবুল আক্তারকে একাই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, নিখোঁজ মুছা সম্পর্কে বাবুল আক্তারের কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা, সে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে বাবুল আক্তার বলেন, একসময় মুছা ও ভোলা তার সোর্স ছিলেন। তার দাবি, মুছা কখনো তার বাসায় যাননি। তারা কেন তার স্ত্রীকে খুন করলেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। কী কারণে, কার নির্দেশে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা জানা নেই বলেও বাবুল জানান। তবে স্ত্রী হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছেন তিনি।
মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দি দেন। তারা বলেন, মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কিন্তু মুছা কার নির্দেশে ও কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য জবানবন্দিতে দেননি তারা। ওয়াসিম ও আনোয়ার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডে তাদের (ওয়াসিম ও আনোয়ার) সঙ্গে মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল শিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে নবী ও রাশেদ ৪ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মিতুকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। অস্ত্র সরবরাহ করেন ভোলা। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত অস্ত্র-গুলিসহ ২৬ জুন নগরের বাকলিয়া থেকে ভোলা ও তার সহযোগী মনির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাকলিয়া থানায় করা পৃথক অস্ত্র মামলায় পুলিশ ২৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। কিন্তু ভোলা অস্ত্রগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন ও কার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন, তা তদন্তে বের হয়নি।
বাবুলের শাশুড়ি সাহিদা মোশাররফ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বাবুল চট্টগ্রামে গিয়েছিল। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তা জানি না। বাবুল ঢাকায় ফিরে এসেছে। সেও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি। ’
৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মিতু। এ ঘটনায় বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় সাতজন গ্রেফতার হন। এর মধ্যে ৫ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাশেদ ও নবীর মৃত্যু হয়। হত্যায় ব্যবহূত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়। অস্ত্র মামলায় দুই আসামি ভোলা ও তার কর্মচারী মনিরের বিচার শুরু হয়েছে। তবে হত্যা মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ মুছা ও কালুকে খুঁজছে পুলিশ।
এদিকে ১ নভেম্বর রাজধানীর পোস্তগোলায় বাস্তবায়নাধীন বেসরকারি আদ্-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন বাবুল আক্তার। নিয়মিত অফিসও করছেন। স্ত্রী মিতু হত্যার পর থেকে বাবুল তার দুই সন্তান আক্তার মাহমুদা মাহির ও তাবাসসুম তাজমিন টাপুরকে নিয়ে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন। বিডি প্রতিদিন
১৭ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস