মহিউদ্দীন জুয়েল : চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের মৃত্যুর ২৭ দিন পর গতকাল তার মায়ের নিজ হাতে লেখা একটি চিঠি ছবি আকারে ফেসবুকে দেয়া হয়।
আবেগ তাড়িত কণ্ঠে তিনি লিখেছেন, ‘আমাকেও একটি মাত্র গিঁট দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেখিয়ে দিন, মোটা চাদর দিয়ে এভাবে গলা কাটে কিনা, সারা দেশের মানুষ দেখুক।’
সেখানে তিনি নিজের পুত্র আত্মহত্যা করতে পারেন বলে বিশ্বাস করতে না পারার কথা তুলে ধরেন। গত ২০শে নভেম্বর রাতে চবির দুই নং গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দিয়াজের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসাপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর গত ২৩শে নভেম্বর দিয়াজের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলে পরিবারের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
তারা দাবি করেন দিয়াজকে ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডারের ভাগবাটোয়ারার জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যা করেছে। দিয়াজের পরিবারের সংশ্লিষ্ট তার আত্মীয়স্বজনরা জানান, প্রতিদিনই পুত্রের শোকে বাসায় বিলাপ করে কান্নাকাটি করেন তার মা ও ভাই বোনেরা। পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে সকাল ৭টায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই স্ট্যাটাসটি দেন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের মা জাহেদা আমিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেইট এলাকায় তার বাসা।
তিনি সেখানকার জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন দীর্ঘদিন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও চিকিৎসকদের অনুরোধ করছি, মোটা কাপড়ের বড় বিছানার চাদর দিয়ে কোনো পশু-প্রাণীকে একটি মাত্র গিট দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফাঁসি দিন। কোনো পশু-প্রাণী না পেলে দিয়াজের মা অর্থাৎ আমি প্রস্তুত আছি।’
তিনি আরো লিখেন, একটি মাত্র গিঁট দিয়ে আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন। সারা দেশের মানুষ দেখুক আত্মহত্যা কাকে বলে? সারা শরীরে এমনকি পায়েও এমন দাগ পাওয়া যায় কিনা? মোটা চাদর দিয়ে এভাবে গলা কাটে কিনা? ফেসবুকে দিয়াজের মা জাহেদা নিজের সন্তানের সঙ্গে থাকা বেশ কিছু ছবিও আপলোড করেন।
এদিকে দিয়াজের মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত শেষে ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় আসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন চিকিৎসক। সকাল ১০টায় তারা দিয়াজের বাসায় যাবেন। এরপর সেখানে আত্মহত্যা করার ঘটনাটি কতটুকু সত্য তা তদন্ত করে ঢাকায় গিয়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দিবেন।
প্রথম দফায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্তে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে জানানো হলে দিয়াজের পরিবার আদালতে আবেদন করেন। পরে বিচারকের নির্দেশে তার লাশ কবর থেকে তোলার পর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয় ঢাকায়। এই সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়ের দাগ থাকার কথা বলা হয়। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানানো হবে বলে জানান দিয়াজের মামা রাশেদ আমিন চৌধুরী। এমজমিন
২৮ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি