শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭, ১২:৪৯:৪৪

‘চোখ মেলে দেখি দাউ দাউ আগুন জ্বলছে’

‘চোখ মেলে দেখি দাউ দাউ আগুন জ্বলছে’

মহিউদ্দীন জুয়েল : বাসার ভেতর আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি, ছোট বোন ইফতি আর বয়স্ক দাদি। রাত তখন কয়টা হবে ঠিক মনে নেই। হয়তো ফজরের নামাজের কিছু সময় আগে। রাত সাড়ে ৪টাও হতে পারে। হঠাৎ চোখ মেলে দেখি দাউ দাউ আগুন জ্বলছে ঘরের ভেতর।

দাদি ও মার শরীর পুড়ে যাওয়ায় চিৎকার করছে। অন্যদিকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছোট বোনের মাগো চিৎকার কানে আসছেন। নিজের জীবন বাঁচাবো না তাদের গায়ে পানি ঢালবো বুঝতে পারছিলাম না। গতকাল রাতটি ভয়ঙ্কর ছিল।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শুয়ে বিছানায় ছটফট করতে থাকা আরিফ (২৬) ঠিক এভাবেই বলছিলেন ঘরের ভেতর বিস্ফোরণের কথা। গতকাল সকালে তার সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তার পাশে শুয়ে বিলাপ করছিলেন মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার পর তার দাদি সুমেদা বেগম (৭০)-এর ১০০ ভাগ শরীর পুড়ে গেছে। ৮০ ভাগ পুড়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আরো এক বোন ইফতি (১৬)। গতকাল ভোররাতে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার দেওয়ান বাজারের ছয়তলা একটি ভবনে রহস্যজনক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

কেউ কেউ এটিকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বললেও আহত ব্যক্তির পরিবার বলছে তারা সিলিন্ডার ব্যবহার করেন না। পুলিশ ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করছে। এই ঘটনায় আরিফসহ একই পরিবারের ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।

বাড়ির বাইরে থাকায় বেঁচে গেছেন আরিফের মা নাসিমা আকতার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ শেষ করে প্যাকেজিং ব্যবসা করছিলেন বলে জানান আরিফ। অন্যদিকে তার ছোট বোন ইফতি কুসুম কুমারী সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের বেডে শুয়ে আরিফ বলেন, আমরা যে ভবনে থাকি তার নাম ‘মাদ্রাসা আরেবীয়া খাইরিয়া এতিমখানা’ ভবন। এই ভবনের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে এটি নামে এতিমখানা হলেও এখন কোনো এতিম থাকে না। আসলে এই ভবনের মালিক বাড়িভাড়া দিয়ে ওই নামে একটি এতিমখানা চালান বলে আমরা জানি।

আরিফ বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাবা-মা গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ায় চলে যাওয়ায় তারা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান। রাতের খাবার খেয়ে আমরা ৩ জন যার যার রুমে ঘুমিয়ে পড়ি। গভীর রাতে বিকট আওয়াজে সবার ঘুম ভাঙে। দেখি পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে।

তিনি বলেন, দাদির শরীরে আগুন লাগায় মাংস ১০০ ভাগ পুড়ে গেছে। পাশের কক্ষে বোনটিও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভাইয়া বলে চিৎকার করছে। কখনো মাকে ডাকছে। দ্রুত নিচে নেমে দারোয়ানকে পুরো ভবনের সব সুইচ অফ করে দিতে বলি। কিভাবে আগুন লাগলো আমরা জানি না। কারণ আমাদের বাসায় কোনো সিলিন্ডার নেই। তাহলে বিস্ফোরণ হলো কী করে?

আরিফের মা নাসিমা আকতার বলেন, আমরা ৮ বছর ধরে আছি ওই বাসায়। পাশের বাসায় সিলিন্ডার অনেকে ব্যবহার করেন। মেয়েটা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার পিঠ, শরীর, হাত সব পুড়ে গেছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আল্লাই পারেন তাকে বাঁচাতে।

তিনি আরো বলেন, খবর শুনে আচমকা মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না এমন দুর্ঘটনা আমার পরিবারে হবে। বিস্ফোরণে বাসার দরজা, জানালা সব ভেঙে গেছে। দেয়ালও ভেঙে পড়ছে।

সরজমিনে গতকাল দুপুরে নগরীর বাকলিয়া থানার দেওয়ান বাজারের ছয়তলা ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য দলে দলে মানুষ আসছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রবিউল জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের ভবনের জানালার কাচও  ভেঙে পড়েছে। বাসার ভেতরে যখন আগুন লাগে তখন ভোররাত হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাসার ভেতরে গ্যাস জমা হয়েছিল। সেখান থেকেই হয়তো অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। দুর্ঘটনায় ওই বাসার ভেতরের দেয়াল ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। কেবল তাই নয়, আগুনের লেলিহান শিখার কারণে সামনের ভবনের গ্রিল বেঁকে গেছে। জিনিসপত্র পুড়ে ছাই।
 
এই বিষয়ে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। বাসায় সিলিন্ডার নেই। অথচ কি ভয়াবহ বিস্ফোরণ। আলামত দেখে আমরা এই ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা মনে করছি না। বোমা বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। আশা করছি কারণ অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। এমজমিন
২৮ জানুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে