চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন।
অসময়ে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় এবং পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে যাওয়ার জন্য বার বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বসবাসকারীরা সরে আসছে না।
বিগত ১০ বছরে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় ১০টি পাহাড় ধস ও ভূমি ধসের ফলে অন্তত দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনের সতর্কতা সত্বেও পাহাড় দখল করে ওঠা ঘরবাড়ি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন জানান, চট্টগ্রাম নগরীর ছোট-বড় ১৩টি পাহাড় চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
বার বার মাইকিং করে তাদেরকে সরে যাবার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড় ধসসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, গত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মমিনুর রশিদ জানান, চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকার পাহাড়সমূহকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে।
কিছুদিন পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করা বসবাসকারীদের সরিয়ে নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযানের পর আবারও সেখানে ফিরে এসেছে অধিকাংশ লোকজন।
প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নগরীর ১৩টি ঝুঁকিপুর্ণ পাহাড় ও টিলার মধ্যে ১১টিতে সবচেয়ে বেশি ৬৬৬ পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে।
লালখান বাজারের মতিঝর্ণা ও বাঘঘোনা এলাকা ছাড়াও পাহাড়তলীর একে খান শিল্প গোষ্ঠীর পাহাড়, লেকসিটি পাহাড় এলাকায় ১২টি পরিবার, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি এলাকায় ২৭টি পরিবার, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ২২টি, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে ১১টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমি উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি, বাটালি হিল পাহাড়ে ৩২০টি এবং নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড় ও ফয়’স লেক আবাসিক এলাকার কাছে অবস্থিত পাহাড়ে বেশ কিছু পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।
প্রসঙ্গত, বিগত ১০ বছরে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার পাহাড় ধস ও ভূমি ধসের ফলে অন্তত দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। শুধু ২০০৭ সালের ২১ জুন নগরীর সেনানিবাস সংলগ্ন কাইচ্ছাগোনাসহ সাতটি এলাকায় প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতায় ১২৭ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে।
২০১১ সালের জুনে বাটালি হিলে আবার পাহাড় ও নির্মাণাধীন সুরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
২০১২ সালের ২৬ জুন নগরীর চার স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে খুলশী থানাধীন ইস্পাহানি মোড় এলাকায় পাহাড় ধসে এক গৃহবধূ মারা যান।
একই বছর ২৯ জুলাই নগরীর লালখান বাজার এলাকার ট্যাংকির পাহাড় এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে।
২০১৪ সালের নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালে লালখান বাজার ও বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল চাপায় এবং পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ ছয় জনের করুণ মৃত্যু ঘটে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে