চট্টগ্রাম: জয়দীপ্ত দত্ত সকালে নাশতা সেরে মায়ের হাত ধরে স্কুলে এসেছিল। দুপুরে বাসায় গিয়ে মা-ছেলের ভাত খাওয়ার কথা। গতকাল চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টির পড়ায় মা সুলতানি খিচুড়ি রান্না করে এসেছেন বাসায়। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের লাইব্রেরিতে চলছিল ক্লাস। ক্লাসটি নিচ্ছিলেন জয়দীপ্ত দত্তের মা রিংকু দত্ত। রিংকু দত্ত ওই স্কুলেরই লাইব্রেরিয়ান। ক্লাসটি শেষে ছাত্রদের দুপুরের বিরতির কথা ছিল। ক্লাসও শেষ শিক্ষার্থীরা টিফিন ছুটিতে হুড়াহুড়ি করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু জীবিত বের হওয়া হলো না জয়দীপ্তের। ক্লাসকক্ষে আলমারি চাপা পড়ে মায়ের সামনেই নিহত হয় সে। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন তার মা রিংকু দত্তও।
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত জয়দীপ্ত দত্ত (১১) সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। সে ফিরিঙ্গিবাজারের হাজী কলোনির দেবাশীষ দত্তের ছেলে। তার বাবা ও মা দু’জনই স্কুলশিক্ষক। বাবা দেবাশীষ দত্ত কর্ণফুলী থানার বড় উঠান এলাকার দিয়াং মিশনারি স্কুলের শিক্ষক।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে জয়দীপের ওপর আলমারি পড়ে যায়। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথায় আঘাত রয়েছে।
শিশুটির জ্যাঠা দেবরাজ দত্ত ডেভিড বলেন, ‘লাইব্রেরিতে একটি আলমারির ওপর আরেকটি আলমারি রাখা ছিল। ওপরে রাখা আলমারিটি পড়ে গেলে তার নিচে চাপা পড়ে জয়দীপ।
স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, জয়দীপ প্রতিদিন তার মায়ের সঙ্গে সকালে স্কুলে আসে। দুপুরে একসাথে বাসায় গিয়ে টিফিন সেরে স্কুলে আসে। মায়ের সাথে বিকেলে বাসায় ফিরে। ক্লাসে সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল।
ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের কান্নায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। দুপুরের পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একই অবস্থা দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জয়দীপ নিহত হওয়ার খবর তার বাবার স্কুলে পৌঁছলে তিনি বেলা ২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। এ সময় তিনি বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন।
বিকেলে লাশটি ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস