রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৪৫:৪৬

চট্টগ্রামে ফের উত্তাপ ছড়ালেন মহিউদ্দিন

চট্টগ্রামে ফের উত্তাপ ছড়ালেন মহিউদ্দিন

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে : হজে যাওয়ার আগে হঠাৎ উত্তাপ ছড়ালেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। শুক্রবার সন্ধ্যায় বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে খোঁচা মেরে বক্তব্য দিয়ে রাতেই উড়াল দেন তিনি।

হজে গমন উপলক্ষে সন্ধ্যায় দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও নিকটাত্মীয়রা যখন নগরীর চশমা হিলের বাসভবনে গমগম করছিলেন ঠিক তখনি আ জ ম নাছির উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার নেত্রী মেয়র পদে তাকে মনোনয়ন দেন। আমি তাকে মেয়র বানাই। কিন্তু এখন তাঁর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে-রাষ্ট্রপতির চেয়েও তিনি বড় হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, নগরীর জলাবদ্ধতা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্পের কাজে অপকর্মের কথাও বলেন তিনি।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রতি সহানুভুতিও প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকরা এখন সবকিছু লিখতে পারছেন না। ৫৭ ধারার ভয়ে তাদের লেখনী বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সাংবাদিকরাও এ দেশের সন্তান। আপনারা লেখেন, দেখবেন সাধারণ মানুষের মুখও খুলে গেছে। মহিউদ্দিন চৌধুরী এ সময় নগরীর জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর অবর্ণনীয় দুঃখ ও কষ্ঠের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বৃষ্টি ছাড়াও নগরীর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ মাসে দু’বার ৫-৬ দিন করে ডুবছে। অফিসপাড়া আগ্রাবাদ হাঁটু থেকে বুক সমান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানিতে থাকতে থাকতে মানুষের পায়ে ঘা হয়ে গেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই।

তিনি বলেন, আপনি (নাছির উদ্দিন) বাঁধ দিচ্ছেন, বাঁধ ভাঙছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সরকার তো জলাবদ্ধতা নিরসনে আপানকে অনেক টাকা দিয়েছে। উন্নয়ন তো কিছুই হচ্ছে না। বরং উন্নয়নের টাকা দিয়ে অপকর্ম করছেন।

তিনি বলেন, আমি বলছি কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং ছাড়া নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং হলে নগরীর নালা-নর্দমার সব আবর্জনা চলে যাবে। জলাবদ্ধতা হবে না। কর্ণফুলী নদী খননে ড্রেজার আনার জন্য আমি বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। তারা যদি বিষাক্ত জাহাজ, ভাঙা জাহাজ আনতে পারে তাহলে ড্রেজার আনতে পারবে না কেন?  

এসব কথা বলে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী রাতেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজের উদ্দেশে বিমানে সৌদি আরবের পথে উড়াল দেন। নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সমপাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সমপাদক শফিক আদনান, প্রচার সমপাদক শফিকুল ইসলাম ফাংক, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, সদস্য এসএম সাঈদ সুমন ও শেখ নাছির উদ্দিনহর শতাধিক আনুসারী নেতাকর্মী তাকে বিদায় জানান।  

এদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরী এসব বক্তব্য নিয়ে শুরু হয় আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের মাঝে নানা গুঞ্জন ও প্রতিক্রিয়া। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, তিনি এসব কেন বলেছেন আমি জানি না। আমি তো কোনোদিন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলিনি। আমার মধ্যে তো দাম্ভিকতাও নেই। আমার চরম শত্রুও বলতে পারবে না, আমার মধ্যে চুল পরিমাণ দাম্ভিকতা আছে। উন্নয়ন নিয়ে বলার বিষয়ে প্রত্যেকের ফান্ডামেন্টাল রাইট (মৌলিক অধিকার) আছে। এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে আমার বলার কিছু নাই। আমার মূল দায়িত্ব হচ্ছে কাজ করা। লক্ষ্য ঠিক রেখেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিলেও প্রায়ই নানা বাক্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে রয়েছেন। আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তাদের সাপে-নেউলে অবস্থান প্রকাশ্যে আসে। এরপর নানা ইস্যু নিয়ে প্রায় রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াতে দেখা যায় দু’জনকে।

সর্বশেষ গত ১০ই এপ্রিল লালদীঘির মাঠে সমাবেশে মেয়র নাছিরকে অযোগ্য ও অথর্ব উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১১ই এপ্রিল মহিউদ্দিন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে পাঁচ হাজার লাঠি প্রস্তুত রাখার কথাও বলেছিলেন। এর আগে মেয়রের একবছর পূর্তিতে তিনি অপাত্রে ঘি ঢেলেছেন বলেও মন্তব্য করেন। কিন্তু ১৭ই এপ্রিল আবার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হাত তুলে দু’জন ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার করেন।

প্রায় পাঁচ মাস চুপ থাকার পর গতকাল শুক্রবার রাতে হঠাৎ নাছির উদ্দিনকে খোঁচা মেরে বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে আবার উত্তাপ ছড়িয়ে গেলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে