নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের সদর উপজেলার খরুলিয়ায় এক অভিভাবককে স্কুল মাঠে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
রোববার সকালে নির্যাতনের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী অভিভাবক আয়াত উল্লাহর সোমবার কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক, শিক্ষক বোরহান উদ্দিন ও ওবাইদুল, দফতরি নুরুল হক এবং তাদের সহযোগী আবদুল আজিজ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আয়াত উল্লাহ বলেন, নির্যাতনকারীরা জামায়াতের বড় মাপের নেতা হওয়ায় আমাকে পুলিশ ও সাংবাদিকের কাছে মুখ না খুলতে হুমকি দেয়। পাশাপাশি জোরপূর্বক মুচলেকা আদায় করে। যে কারণে রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলার সাহস পাইনি। পরে রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও দেশবাসী দেখলে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন খোঁজখবর নেয়। তখন আমি (আয়াত) বিস্তারিত ঘটনা বা আমার ওপর বর্বতার করুণ কাহিনি প্রশাসনকে বলার সুযোগ পাই।
এদিকে সোমবার সকালে ঘটনাস্থল ও অভিভাবক আয়াত উল্লাহর বাড়িতে যান কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নোমান হোসেন প্রিন্স। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, এ ঘটনায় জতিড়দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পাশাপাশি অভিভাবককে নির্যাতনের ঘটনায় খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন, খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকসহ ৩ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে ইউএনও জানান।
এর পর দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজারস্থ র্যাব-৭ এর পৃথক দুটি টিম। পরিদর্শনে নেতৃত্ব দেন র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার কারণে উপস্থিত সাবেক ছাত্র ও শিক্ষকরা আবেগি হয়ে কাজটি করেছে। তবে হাত, পা বেঁধে বা রশি ব্যবহার করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটা ঠিক করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহর স্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবির খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ছাত্র হিসেবে আবির খুবই ভালো। কিন্তু প্রথম শ্রেণিতে ছেলে কেন এ প্লাস পায়নি ও পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানোর কারণ জানতে আমার স্বামী রোববার সকালে স্কুলে যায়। এ সময় আয়াতের সঙ্গে স্কুলশিক্ষকের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে চড়াও হয়ে হাত, পা, বেঁধে নির্যাতন চালায় খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন এবং খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক তাদের সহযোগী ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ।
এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া জানান, ঘটনা শোনার পর ওই অভিভাবকের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়। তারপর স্কুলের শিক্ষক ও তালিকাভুক্ত জামায়াত নেতাদের ধরার জন্য অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ঘটনার পর পরেই এলাকা ছাড়ার কারণে হামলাকারীদের আটক করা সম্ভব হয়নি।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস