চট্টগ্রাম: প্রতিবন্ধকতাও হার মানাতে পারেনি তাকে। প্রবল মনের জোরেই এগিয়ে আজ এতদূর। চট্টগ্রামের কুয়াকাটার বেল্লালের জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই। দু’হাতের আশায় থেমে যায়নি তার জীবন। দুটো পা দিয়েই লেখার কাজ রপ্ত করেছেন তিনি। এ বছর পা দিয়ে লিখেই দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন বেল্লাল।
বেল্লালের মা হোসনে আরা, আমার ছেলে শিক্ষিত হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। ছোট্ট হাত ছাড়া বেলালকে তিনি প্রশিক্ষণ দেন পা দিয়ে লেখার। প্রথমে স্লেটে চক দিয়ে ঘষে ঘষে দাগ দিত সে, আস্তে আস্তে পা দিয়েই মুক্তঝরা লেখা লিখতে শুরু করে বেলাল।
এরপর ভর্তি করা হয় এক কিলোমিটার দূরের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুরু হয় বেল্লালের শিক্ষাজীবন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মায়ের সহায়তায় প্রতিদিন এক কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করা। পা দিয়ে লিখেই বেল্লাল ৫ম শ্রেণিতে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছে।
বেলালের বাবা মো.খলিল আকন একজন দিনমজুর। বাড়িতে আছে বেল্লালের আরও তিনটি ভাই-বোন। দরিদ্র দিনমজুর বাবার মেধাবী প্রতিবন্ধী কিশোরের সংগ্রাম থেমে যাবার পথে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা ধরনের সুযোগ–সুবিধা থাকলেও কিছুই জুটেনি বেল্লালের ভাগ্যে।
লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তার যে চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতা দরকার, তার কোনোটির সামর্থ্য নেই ওর পরিবারের। এ অবস্থায় বেল্লালের বাবা চান না আর লেখাপড়া করুক। লেখাপড়া করে যে ও কাজ পাবে তার নিশ্চয়তা কী আছে? ঘরে বিবাহযোগ্য দুই কন্যা। ছেলের পেছনে ব্যয় করে ওদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চান না তিনি।
তবে নিজের অবস্থানে অনড় বেলাল। তার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা শেষে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। তার শিক্ষক উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, বেল্লাল অত্যন্ত মেধাবী। সে নিয়মিত মাদ্রাসায় আসতো। বেলালের পাশে হয়তো কেউ একসময় দাঁড়াবে, পূরণ হবে তার স্বপ্ন!
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস