মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে : একক আধিপত্য বিস্তার, একঘেয়ে সিদ্ধান্ত, কিছু নেতার রাজনীতিতে ‘জড়িয়ে পড়া-অতি জড়িয়ে পড়া’— ইত্যাদি বিতর্কের কারণে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন শীর্ষ নেতাদের অনেকে। ফলে এক সময়ের আলোচিত এ সংগঠনটি এক প্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
বড় বড় নেতারা নিষ্ক্রিয় হওয়ায় পরিণামে এখন বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেসরিলিজ প্রদান ও শানে রেসেলাহ সম্মেলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে তাদের কার্যক্রম। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈন উদ্দীন রুহীর দাবি কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আমরা শুধু শানে রেসেলাহ সম্মেলন ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে নিজেদের সক্রিয় রেখেছি। অনুকূল পরিবেশ এলে আবার ১৩ দফা দাবি নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, অনেক সিনিয়র নেতা এখন সংগঠনে আগের মতো গুরুত্ব পান না। অনেককে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডাকাও হয় না। তাই সিনিয়র নেতাদের অনেকের সঙ্গেই হেফাজতে দূরত্ব বেড়েছে। সিনিয়র নেতারা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এখন হেফাজত আগের মতো কর্মসূচি দিতে পারছে না।
হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের দাবির মুখে উচ্চ আদালত থেকে গ্রিক মূর্তি অপসারণ, পাঠ্যবই পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া তাদের দাবির মুখে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় সরকার। দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংগঠনটিতে এখন চলছে গৃহদাহ।
শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একক আধিপত্য বিস্তার, নিজস্ব বলয় তৈরি, শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ একক ক্ষমতা বলে একঘেয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কিছু কিছু নেতার ‘অতি রাজনীতি’তে অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই। তাই শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন সংগঠনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন না। এমনকি প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মাওলানা আবদুল মালেক হালিম। তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। হেফাজতের বর্তমান কমিটির সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনিও ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অভ্যন্তরীণ কোনো বৈঠকে আসছেন না।
একই ভাবে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা সালাহউদ্দিন, নায়েবে আমির মো. ইদ্রিস, আবদুল হামিদ মধুপুরী, মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা আকদুল কুদ্দুস, মাওলানা সাজেদুর রহমানসহ কমপক্ষে ২০ হেফাজতে ইসলাম নেতা। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসএস