নিরাপত্তার চাদরে মোড়া চট্টগ্রাম
নিউজ ডেস্ক : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে গোটা চট্টগ্রামকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং, চেকপোস্ট এবং যানবাহনে তল্লাশিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে সাকা চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি রাউজান উপজেলা ও পাশের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ঘিরে ফেলা হয়েছে রাউজানের আলোচিত কুণ্ডেশ্বরী ভবনকে। রাউজানের জগৎমল্লপাড়া, ঊনসত্তরপাড়াসহ প্রায় ২০টি এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিরাপত্তাবলয় থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলাসহ গোটা জেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বিশেষ করে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় স্থানীয়রাসহ বহিরাগতদের চলাফেরার ওপরও রাখা হচ্ছে কঠোর নজরদারি। গ্রামের লোকজন ছাড়া বাইরের লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাকা চৌধুরীর মামলার সাক্ষীদের বসবাসরত এলাকাগুলোয়। কুণ্ডেশ্বরী ভবন ও এর আশপাশে নূতন চন্দ্র সিংহের প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজ, ছাত্রীদের আবাসিক হল, আয়ুর্বেদিক ওষুধ, মিনারেল ওয়াটারসহ সব স্থাপনা সালাউদ্দিন কাদেরের অনুসারী সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা আছে প্রশাসনের। তাই কুণ্ডেশ্বরী ভবনকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কুণ্ডেশ্বরী ভবনের মূল ফটকে লাগানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ভবনের কর্মচারীরা
জানান, কুশ্বেরী ভবনের পুরো সীমানায় ১৬টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে পর্যবেক্ষণ কক্ষও আছে।
রাউজান থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, 'রাউজানে সাকা চৌধুরীর মামলায় ৭০-৮০ জন সাক্ষী আছেন। তাদের ঘরবাড়ি ও এলাকায় ২০টি সশস্ত্র ফোর্স সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় আছে। এ ছাড়া প্রতিটি এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল দলও আছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এমন নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে।' শুধু কুশ্বেরী ভবন নয়, পার্শ্ববর্তী জগৎমল্লপাড়া, ঊনসত্তরপাড়ায়ও এমন নিরাপত্তা বেষ্টনী মোতায়েন আছে বলে জানান তিনি।
নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. হাফিজ আকতার বলেন, 'রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্মড পুলিশ ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িকে সতর্কাবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নাশকতাকারীদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।'
এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীতে আগে থেকেই জোরদার ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নগরজুড়ে অধিকাংশ যানবাহনে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সব বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম বন্দর, আদালত ভবন, গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে অর্ধশতাধিক চেকপোস্ট। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত দুই হাজার পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, 'কেপিআই স্থাপনায় বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে অর্ধশতাধিক চেকপোস্ট, সিএনজি অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলে তল্লাশি চলছে।'
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির বলেন, 'বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিমানবন্দরের দর্শক গ্যালারিতে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে।
২১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি