‘এত টাকা কোথা থেকে দেব বলার সাথে সাথে রনি আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। ১০ মিনিটের বেশি সময় মারধর করেন। এক মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন।’
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের এজাহারে নির্যাতিত রাশেদ মিয়া এভাবেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। রাশেদ মিয়া নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনা না মিটতেই আবারও রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) নগরের পাঁচলাইশ মডেল থানায় এ বিষয়ে এজাহার দিয়েছেন কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়া। এজাহারে নোমান চৌধুরী রাকিবসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এজাহারে মোহাম্মদ রাশেদ মিয়া উল্লেখ করেছেন, আট বছর ধরে তিনি ইউনিএইডের (ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং) পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। বিবাদীরা দীর্ঘদিন তার অফিস জোর করে ব্যবহার করতেন। ভয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলে জোর করে টাকা নিয়ে যেতেন। অফিস ব্যবহার করতে না দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ে ইউনিএইড কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় রনিসহ বিবাদীরা অনধিকার প্রবেশ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এজাহারে রাশেদ মিয়া আরো বলেন, এত টাকা কোথা থেকে দেব বলার সাথে সাথে ১ নম্বর আসামি (রনি) আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে। ১০ মিনিটের বেশি সময় মারধর করেন। এক মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর গত ১৩ এপ্রিল আমি সুগন্ধার বাসা থেকে বের হয়ে মুরাদপুর মোড়ের পূর্ব পাশে মাজারের সামনে পৌঁছালে আসামিরা টানা হেঁচড়া করে বুড়ি পুকুর পাড়ের অ্যালুমিনিয়াম গলিতে নিয়ে যান এবং রনি ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এত টাকা কোথা থেকে দেব বললে হকিস্টিক দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় বাড়ি মারেন। আমি মাথা সরিয়ে নিলে বাম কানে মারাত্মক জখম হয়। অনেক কষ্টে তাদের বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা পরে দেব বলি। তখন রনি পাসপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বললে আমি রাজি হই। এরপর নোমান চৌধুরী রাকিব মোটরসাইকেলে আমাকে সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসলে আমার ও স্ত্রীর পাসপোর্ট এবং ৩৫ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দিই। এরপর তারা আমাকে চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিম পাশের গেটে ফেলে যায়। আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। কিন্তু আসামিদের হুমকির কারণে বাসা থেকে বের হতে না পারায় এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে।
রাশেদ মিয়া
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ এজাহার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এটি মামলা হিসেবে নেওয়া হবে কিনা সেটি নিশ্চিত হবো। বাদী কিছু ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপ জমা দিয়েছেন।
তবে নুরুল আজিম রনি দাবি করেছেন, অভিযোগকারী তার ব্যবসায়িক পার্টনার ও বন্ধু হন। পাওনা টাকা না দিতেই পুরনো এবং মীমাংসিত বিষয়কে নতুন করে সাজিয়ে তিনি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। চাঁদা দাবির ঘটনা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ছাত্রদের পক্ষে আন্দোলনের এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ ড. জাহেদ চৌধুরীকে মারধরের ঘটনায় রনিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় চকবাজার থানায়।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি