চট্টগ্রাম থেকে : ছাত্রলীগ নেতার চড় খাওয়া সেই ব্যক্তি বাড়িছাড়া। চড় মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সংগঠন থেকে অব্যাহতি পাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির ভয়ে বাড়িছাড়া কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়া। নিরাপত্তা চেয়ে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। নিজের বাসা ছেড়ে রাশেদ এখন পরিবার নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকছেন।
বৃহস্পতিবার নগরের পাঁচলাইশ থানায় নুরুল আজিমসহ ছাত্রলীগের আরেক কর্মীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগটি করেন রাশেদ মিয়া। অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাত-আটজন জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।
আজ বিকেলে রাশেদ মিয়া বলেন, নুরুল আজিমের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও মারধরের ঘটনায় মামলা করার পরপরই তিনি (নুরুল আজিম) লোকজন নিয়ে তাঁর বাসায় যান। সেখানে না পেয়ে তাঁর কোচিং সেন্টারে যান। বাসায় কাউকে না পেয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। এ কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জীবননাশের আশঙ্কায় তিনি বাসায় না থেকে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে নুরুল আজিমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদের কাছে তিনি সাড়ে নয় লাখ টাকা পাবেন। ওই টাকার জন্য কোচিং সেন্টারে গিয়েছিলেন।
চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের চড় মারার ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও চিত্রটি গত ১৭ ফেব্রুয়ারির বিকেলের। ওই দিন বিকেল ৫টা ২৬ মিনিট থেকে ৩২ মিনিট পর্যন্ত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, রাশেদ মিয়া কোচিং সেন্টারে তাঁর কার্যালয়ে বসে আছেন। সেখানে ঢুকে নুরুল আজিম উত্তেজিত হয়ে যান। একপর্যায়ে রাশেদ মিয়ার চুল ধরে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন। এরপর চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। ছয় মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, রাশেদ মিয়াকে ১৩টি চড় মারেন নুরুল আজিম। এ সময় হাত জোড় করে ছিলেন রাশেদ মিয়া।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর আজ বিকেলে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম কোচিং সেন্টারের পরিচালককে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে থানায় জিডি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তার জন্য যা করার সব করবে পুলিশ। আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। নুরুল আজিমকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না, উত্তরে পরিদর্শক তদন্ত বলেন, তাঁরা দেখছেন।
পাঁচলাইশ থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, নুরুল আজিম ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং সেন্টারে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ে ওই কোচিং সেন্টারে গিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি। না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর ১৩ এপ্রিল নগরের মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় রাশেদকে একা পেয়ে মারধর করেন নুরুল আজিম ও ছাত্রলীগ কর্মী নোমান চৌধুরী। এ সময় তাঁরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা চান। টাকা নেই জানানো হলে নুরুল আজিমের নির্দেশে নোমান চৌধুরী সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়ে রাশেদের স্ত্রীর পাসপোর্টসহ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। বাকি টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এর আগেও ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহেদ খান বাদী হয়ে নুরুল আজিমসহ ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছিলেন। প্রবেশপত্রের সঙ্গে উন্নয়ন ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৯ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে নুরুল আজিমের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সেদিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩১ মার্চ বাড়তি ফি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এরপর কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় ৩১ মার্চ দুপুরে নুরুল আজিম আবারও ওই কলেজে যান। তখন টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে নুরুল আজিম ও তাঁর কর্মীরা অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
গতকাল রাত আটটার দিকে নুরুল আজিমকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান। নুরুল আজিমও তাঁর ফেসবুক পাতায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনপত্রটি দেন।
নুরুল আজিমের চড় মারা, চুল ধরে টানাহ্যাঁচড়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন। তিনি আজ বলেন, এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। যাঁরা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে আছেন, তাঁদের সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে রাজনীতি করা উচিত। নইলে আগামী নির্বাচনে বিরোধী দল এই সুযোগটি কাজে লাগাবে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। --প্রথম আলো
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস