চট্টগ্রাম থেকে : চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসপিয়া আমিন হত্যাকাণ্ড এখনো রহস্যাবৃত। শনিবার জিইসি মোড় থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সড়কের যত সিসি ক্যামেরা রয়েছে সবকটির ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে সিটি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাসপিয়াকে বহনকারী সেই সিএনজি অটোরিকশা শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।
তবে সেই সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ বা চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার চারদিন পরও আদনান ছাড়া মামলার আর কোনো আসামি গ্রেফতারে সংবাদ নেই। উদ্ধার করা হয়নি তাসপিয়ার সোনার আংটি ও ব্যবহৃত মোবাইল।
এদিকে মেয়ে হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন। শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আমি তাসপিয়ার আব্বু। আমার মেয়ে নিষ্পাপ, অবুঝ। কখনো একা বাড়ির বাইরে যায়নি। তবে আদনানদের ফাঁদে পড়ে এক মাসের মাথায় নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে আমার কন্যা।’ বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাসপিয়ার বাবা বলেন, সবার ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে আব্বু-আম্মু বলে ডাকে। কিন্তু আমার তাসপিয়া আজ ক’দিন আমাকে আব্বু বলে ডাকে না।
মোহাম্মদ আমিন বলেন, পাষণ্ডরা নির্দয়ভাবে নির্যাতন করে চোখ, নখ উপড়ে ফেলে হত্যা করেছে আমার তাসপিয়াকে। তার পিঠে-বুকে রয়েছে নির্দয় নির্যাতনের ছাপ। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
তাসপিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কক্সবাজারের টেকনাফের শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব টেকনাফ। ওই মানববন্ধনে মিডিয়ার সামনে কথাগুলো বলেন তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন।
এই মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন অংশ নেন। এদিকে রোববার আদালতে তাসপিয়ার কথিত প্রেমিক আদনানের রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
পুলিশ জানায়, তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার তাসফিয়া খুন হওয়ার আগে নগরীর গোলপাহাড় এলাকার চায়না গ্রিল নামক রেস্টুরেন্টে বন্ধু আদনানের সঙ্গে অবস্থান করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে জিইসির মোড়ের দিকে যেতে দেখা গেছে।
শনিবার জিইসির মোড় থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা পর্যন্ত পুলিশের ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লাগানো সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ শর্তে বলেন, সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি মোটামুটি শনাক্ত করা হয়েছে। এর বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে আরো কিছু সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রকূলে নেভাল একাডেমির অদূরে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় চোখ, নাক-মুখ থেঁতলানো অবস্থায় তাসফিয়ার মরদেহ পায় পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত তালিকায় থাকা তাসপিয়ার নিথরদেহ শনাক্ত হয় দুপুরের পরে।
তাসপিয়া কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ডেইলপাড়া এলাকার মো. আমিনের মেয়ে। চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোডে তাদের বাসা। তাসফিয়া সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
এই ঘটনার পর বুধবার রাতে পুলিশ তাসফিয়ার কথিত প্রেমিক আদনান মির্জাকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার আদনান মির্জাকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। রোববার তার রিমান্ড শুনানি ধার্য রয়েছে।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস